পোস্টস

গল্প

প্যারাভৌতিক

২৫ এপ্রিল ২০২৪

সায়হাম রহমান শান্ত

মূল লেখক সায়হাম রহমান শান্ত

শীতকাল।রাস্তার মাঝ বরাবর সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান ন্যাড়া ন্যাড়া গাছ।সব পাতা ঝরে গিয়ে গাছগুলো এখন ষাটোর্ধ্ব বয়সের কোনো বৃদ্ধ যেনো।শহরে অবশ্য গাছের খুব একটা বালাই নেই।সৌন্দর্য্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে সরকারি বাজেটে এ গাছগুলো লাগানো হয়েছে।তাছাড়া,হাতেগোনা দু-একটা বাড়িতে নামকাওয়াস্তে গাছ লাগানো হলেও,বেশিরভাগ বাসার পুরোটা জুড়েই শুধু বসতি।তবে,সচেতনতার জেরেই হোক আর সৌন্দর্য্য বর্ধনের উদ্দেশ্যেই হোক,ইদানীংকালে নাগরিক সমাজ বারান্দায় বাগান করছে;যা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।আনিস সাহেব এমনিই একজন সচেতন নাগরিক।ভদ্রলোকের বয়স চল্লিশের কিছু বেশি।রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক মিরপুর রোডের পুরোনো ধাচের একটি দোতলা বাসায় ভাড়া থাকেন।নিচতলায় একটি ছাপাখানা ভাড়ায় চলছে,আর দোতলায় আনিস সাহেব একা ভাড়া থাকেন।তিনিই মূলত পুরো বাসার দেখভাল করেন।বাড়িওয়ালা এ বাসায় থাকেন না।আনিস সাহেবের কোনো পরিবার নেই।একসময় যে পরিবার ছিলোনা,বিষয়টা এমন নয়।বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন।বারো বছর বয়সে বাবা মারা গেলে,মা-কেই জীবনে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন জ্ঞান করেছিলেন।একদিন,সেই মা-ও তাকে একা করে দিয়ে অজানার পথে পাড়ি জমান।তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়েন।ঐসময়ে তিনি এতোটাই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন যে,ছায়া ছাড়া আর কোনো বন্ধু ছিলোনা তার।কিন্তু,জীবন বহমান।জীবন কখনো কারো জন্যে থেমে থাকেনা।সেই নিঃসঙ্গ আনিস সাহেব,আজকাল বন্ধুবান্ধব ছাড়া কিছুই বোঝেন না।তবে,একাকিত্বও তার বেশ প্রিয়।বিয়ে-শাদি করার চেষ্টা যে করেননি,তা নয়।তবে,তিনি যেরকম মেয়ে পছন্দ করেন,সেরকম পাননি।তাই একাই থেকে গেছেন।রাজধানীর সুপরিচিত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষকতা করছেন।ঘড়িতে বেলা দশটা বেজে একুশ মিনিট।ফুলগাছে পানি দিতে দিতে একটা লাকি সুইচ ফ্লেভারের সিগারেট ধরিয়েছেন আনিস সাহেব।গাছে ফুটে থাকা ফুলের ঘ্রাণ মনের ভেতর অন্যরকম একটা পবিত্রতা আনে;আনিস সাহেবের ধারণা অনেকটা এরকমই।সিগারেট টানতে টানতে বারান্দা দিয়ে কিছুক্ষণ বাইরের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করলেন।এটা তার পুরোনো অভ্যেস।মায়ের কাছ থেকে পাওয়া অভ্যেস।মা'কে তো আর দুনিয়াতে চিরস্থায়ীভাবে রেখে দিতে পারেননি,তাই মায়ের সাথে মিল থাকা পুরোনো অভ্যেসটাকেই রেখে দিয়েছেন।সিগারেট শেষ করে বারান্দা থেকে রুমে ঢুকলেন আনিস সাহেব।দোতলার পুরোটা জুড়েই উনি একা থাকেন।দু'টি বেডরুমকে লাইব্রেরি করে ফেলেছেন।সেখানে শুধু সারি-সারি বই আর বই।এরকম একটা বাসা আনিস সাহেবের ছোটোবেলার স্বপ্ন।লাইব্রেরিতে ঢুকে হোমার রচিত "দ্যা ইলিয়াড" বইটি হাতে নিয়ে রুমে ফিরে এলেন।এ বইটি উনি সর্বপ্রথম পড়েছিলেন এসএসসি পরীক্ষার পর।তারপর থেকে তিনি প্রায়ই বইটি পড়েন।উনার বেশ ভালো লাগে।একজন অসম্ভব রকমের সুন্দরীর জন্যে দু'টি রাজ্যের যুদ্ধ।দেবতাদের দুই পক্ষে ভাগ হয়ে যাওয়া।দুই পক্ষেরই জেতার জন্যে মরিয়া হয়ে ওঠা।এসবকিছুই আনিস সাহেবকে মুগ্ধ করে।বইটা টেবিলে রেখে আনিস সাহেব রান্নাঘরে গেলেন এক কাপ চা করার জন্যে।স্টোভ জ্বালিয়ে চায়ের পানি বসানোর পর দরজায় কেউ নক করল।আনিস সাহেবের বাসায় সাধারণত তেমন কেউ আসেনা।মাঝেমাঝে প্রিপেইড মিটারে টাকা শেষ হয়ে গেলে নিচের ছাপাখানা থেকে একজন লোক আসে খবর দেয়ার জন্যে।মিটারে টাকা না ভরলে কারেন্ট আসবেনা।কিন্তু সেই লোকেরও আজ আসার কথা নয়।কারণ,ক'দিন আগেই সে মিটারে টাকা রিচার্জ করে গেছে।তার ফ্ল্যাটে আসার মধ্যে আর আসে কেবল বাড়িওয়ালা।ভদ্রলোক আনিস সাহেবকে খুব সমীহ করে চলেন।বয়সে প্রায় আনিস সাহেবের সমান হলেও,আনিস সাহেবকে "আপনি" সম্বোধন করেন।তারও অবশ্য আসার কথা নয়।কারণ,তিনি আসেন অফিস শেষে বিকেলের দিকে।এতোসব ঘটনার ক্যালকুলেশন করতে করতে,আনিস সাহেব দরজা খুলতে গেলেন।দরজা খুলতেই তার নজরে পড়লো সদ্য কৈশোরে পদার্পন করা এক কিশোরী এবং এক ভদ্রলোক।ভদ্রলোকের বয়স পঞ্চাশের আশেপাশে।খুব সম্ভবত ইনি মেয়েটির বাবা।আনিস সাহেব একটু কেশে বললেন,
— কাকে চাই?
— আমরা আনিস সাহেবের কাছে এসেছিলাম।তিনি কি বাসায় আছেন?
— জ্বী,আমিই আনিসুর রহমান।আসুন ভেতরে আসুন।

আনিস সাহেব তাদেরকে বসার ঘরে নিয়ে গেলেন।বসার ঘরের চারপাশে শুধু ছবি বাঁধাই করা।যদিও কোনো ছবিই আনিস সাহেবের না।লেখক,কবি,গায়ক,গীতিকার,রাজনীতিবিদ সবাই আছেন ছবিতে।কিশোরী মেয়েটি অবাক দৃষ্টিতে দেয়ালে টাঙানো সবগুলো ছবি দেখছে।মনে হচ্ছে তার চোখগুলো কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।মেয়েটি দেখতে দুধে-আলতা সুন্দর।একেবারে ধবধবে সাদা নয়।হলদে সাদা বলা যায়।ঠোঁটের বা'পাশে মাঝারি আকারের তিল,টানা-টানা চোখ,হালকা কোঁকড়ানো চুল।পরনে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি।সবমিলিয়ে মেয়েটিকে বেশ দেখার মতোই মনে হয়।এ বয়সের মেয়েরা সাধারণত এতোটা আবেদনময়ী হয় না।তবে মেয়েটি যথেষ্ট আবেদনময়ী।যেকোনো ছেলেই নিজের অস্তিত্ব ভুলে,ঘন্টার পর ঘন্টা তার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে পারবে।আনিস সাহেব বলে উঠলেন,
— বলুন,আপনাদের কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
— আসলে,ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সায়মা ম্যাম আমাদেরকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন।
— সায়মা দেশের বাইরে ট্রেনিংয়ে গেছে তাইতো?
— জ্বী,স্যার।
— আচ্ছা,আমি চা করে নিয়ে আসি।আপনারা একটু বসুন আর আমার পছন্দের একটি গান শুনুন।আশা করি মন্দ লাগবেনা।

একথা বলে আনিস সাহেব চা করতে চলে গেলেন।বসার ঘরে কবীর সুমনের "তোমাকে চাই" গানটি বেজে চলছে।কিশোরী মেয়েটি গান শুনে আরেকটু বিস্মিত হলো।সে গান শুনতে খুব ভালোবাসে।এখানে না আসলে হয়তো তার এই গানটি শোনা হতোনা।গানটি তার প্রথমবার শুনেই দারুণ ভালো লাগলো।আনিস সাহেব তিন কাপ চা হাতে ফিরে এলেন।
— বলুন,আমি আপনাদের কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
— আমি মোস্তাফিজুর রহমান।পেশায় ব্যবসায়ী।নিউমার্কেটে আমার নিজস্ব চারটি দোকান আছে।এছাড়াও,আমার এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের ব্যবসা রয়েছে।আর,ও হচ্ছে আমার একমাত্র মেয়ে "নাদিয়া"।নাদিয়া, স্যারকে সালাম দাও।
— আসসালামু আলাইকুম,আংকেল।
— ওয়ালাইকুমুস সালাম।কেমন আছো মা?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি?
— আলহামদুলিল্লাহ।মোস্তাফিজ সাহেব,আপনি বলতে থাকুন।
— আনিস সাহেব,সমস্যাটা আমার মেয়েকে নিয়ে।এইতো গতবছরেও আমার মেয়েটা অনেক হাসি-খুশি ছিলো।হঠাৎ যে ওর কি হলো!ও রাতে একটুও শান্তিতে ঘুমোতে পারেনা।ওকে নাকি নাম ধরে কেউ অনবরত ডাকতে থাকে।তাছাড়া,প্রায়ই ও একটা কালো অবয়ব দেখতে পায়।যার হাত-পা সব দেখতে মানুষের মতো,কিন্তু মাথাটা হায়েনার।ঐ জানোয়ারটা রোজ এসে ওকে নির্যাতন করে।
— (ফের একটা সিগারেট ধরিয়ে) আচ্ছা,রাতে নাদিয়া কি একা ঘুমোয়?
— আগে ও একাই ঘুমোতো।এখন,ওর মা ওর সাথে ঘুমোচ্ছে।স্যার,ওর মা আজ পর্যন্ত তেমন কিছু দেখেনি।
— আচ্ছা।মোস্তাফিজ সাহেব,আপনি একটু দয়া করে পাশের ঘরে যান।নাদিয়ার সাথে আমার একটু কথা আছে।
— জ্বী,আচ্ছা।
— নাদিয়া,তুমি কোন ক্লাসে পড়ো মা?
— ক্লাস টেনে।
— আচ্ছা,তোমার স্কুলের নাম কি?
— সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল।
— বাহ্।বেশ স্বনামধন্য স্কুল তো।তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড আছে?
— হ্যাঁ,আংকেল।আমার একজন বেস্ট ফ্রেন্ড আছে।ওর নাম সঞ্চিতা।আমরা দু'জনই বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছি।
— বেশ ভালো!সঞ্চিতার সাথে তোমার নিশ্চয়ই অনেক মজার মুহূর্ত রয়েছে?
— হ্যাঁ,আংকেল।
— কোন মুহূর্তটা সবচেয়ে বেশি মজার ছিলো,বলো তো।আমারও বেশ জানতে ইচ্ছে করছে!
— একবার আমার এক কাজিন জিসান ভাইয়া আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিলো।ভাইয়া আমার চেয়ে দু'বছরের বড়।আমি তাকে সঞ্চিতার নম্বরে কল দিয়ে একটু প্র‍্যাংক করতে বলেছিলাম।জিসান ভাইয়া কল দেয়ার পর,“হ্যালো,জান” বলেছিলো।আর,দুঃখজনকভাবে কলটা সঞ্চিতার আম্মু ধরেছিল।ব্যাস্!!
— (আনিস সাহেব প্রাণখুলে হাসতে হাসতে) তারপর?
— তারপর জিসান ভাইয়াকে একগাদা বকাঝকা করে আন্টি কল কেটে দিলো।আর,অন্যদিকে সঞ্চিতাকে সকাল-সন্ধ্যা সন্দেহ করতে লাগলো। (হো হো করে হেসে) বেচারি বেশ কয়েকদিন এটা নিয়ে খুব প্যারায় ছিলো।আমি অবশ্য পরে আন্টিকে পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি।এরপর,সব নরমাল হয়ে যায়।
— আচ্ছা,এখন আমার একটা মজার ঘটনা শুনবে?
— অবশ্যই,আংকেল।
— তুমি যে সায়মা ম্যামের কাছে প্রথমে পরামর্শ নিতে গিয়েছিলে,সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।আমরা একই কলেজে পড়াশোনা করেছি।কলেজে পড়াকালীন সময়ে,আমরা প্রচুর বই পড়তাম।ছুটির পর প্রায়ই টিএসসি যেয়ে চা খেতে খেতে সাহিত্য নিয়ে আড্ডা দিতাম।একদিন আড্ডা দেয়ার সময়,এক বৃদ্ধ অসহায় মহিলা আমাদের কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্যে আসে।সায়মা ওর পার্স থেকে দশটাকা বের করে সেই বৃদ্ধাকে দেয়।এর বদলে বৃদ্ধা কি দোয়া করেছিলো জানো?
— আপনারা পরীক্ষায় অনেক ভালো করবেন।এই দোয়া?
— উঁহু,হয়নি।দোয়া করেছিলো,আমাদের সংসার জীবন যেনো সুখে-শান্তিতে কাটে।(হাসতে হাসতে) কোনো বালা-মুসিবত যেনো না আসে।
— (অট্টহাসি দিয়ে) আপনারা শকস আর বৃদ্ধা রকস!
— হ্যাঁ,অনেকটা এরকমই বলতে পারো।এরপর থেকে,আমি ওর সাথে থাকাকালীন অবস্থায় ও আর কোনো বৃদ্ধাকে সাহায্য করেনি!
— হাহা,এটা মজার ছিলো।
— নাদিয়া,তুমি কি আমার বন্ধু হবে?
— হ্যাঁ আংকেল,অবশ্যই।আপনি খুবই মজার একজন মানুষ।
— ধন্যবাদ,তোমাকে।তুমিও খুব দারুণ একজন মানুষ।
— আংকেল,আপনাকে একটা প্রশ্ন করবো?
— হ্যাঁ,করো।
— আপনি কি ভূতে বিশ্বাস করেন?
— হ্যাঁ,করি তো।
— আচ্ছা আংকেল,আপনি কি বাবার কথা বিশ্বাস করেছেন?
— হ্যাঁ,মা।আমি তোমার সাথে ঘটা প্রত্যেকটা ঘটনা বিশ্বাস করেছি।
— থ্যাংকিউ,আংকেল।
— ওয়েলকাম।মা,এবার তুমি পাশের ঘরে যাও আর তোমার বাবাকে আসতে বলো।
— ওকে,আংকেল।

নাদিয়া পাশের ঘরে চলে গিয়ে তার বাবাকে আনিস সাহেবের কাছে যেতে বললো।আনিস সাহেবের বাসায় এসে নাদিয়া কিছুটা অবাক হলো।ভদ্রলোকের বাসাটাকে একটা ছোটোখাটো জাদুঘর বলা যেতে পারে।একজন ব্যাচেলরের বাসা যে এতোটা গোছালো হতে পারে,তা নাদিয়ার জানা ছিলোনা।ভদ্রলোক যথেষ্ট মিষ্টভাষী।মোস্তাফিজ সাহেব পাশের ঘরে গেলেন,
— স্যার,ডেকেছেন?
— জ্বী,বসুন।আচ্ছা,আপনার যদি আপত্তি না থাকে,তবে আগামী শুক্রবার আমি আপনার বাসায় যাবো।সঞ্চিতাকেও ডাকবেন।সবাই একসাথে একবেলা খাবো।
— অবশ্যই,কেনো না?আমি আপনাকে ঠিকানা লিখে দিচ্ছি।
— ধন্যবাদ।
ঠিকানা লিখে দিয়ে মোস্তাফিজ সাহেব চলে গেলেন।১২১/২৩ চকবাজার,ঢাকা।আনিস সাহেব ঠিকানাটা মানিব্যাগের সাইড পকেটে রাখলেন।পুনরায় একটা সিগারেট ধরিয়ে ভাবতে লাগলেন।আনিস সাহেব এসব লিখতে খুব একটা পছন্দ করেন না।রোগী দেখতেও না।পড়াতে আর পড়তেই বেশি ভালোবাসেন।তবে,তার বেস্টফ্রেন্ড ডাঃ সায়মা মনে করেন,মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক হলেও আনিস সাহেব অনেক বাঘা বাঘা সাইকোলজিস্টকে পেছনে ফেলার ক্ষমতা রাখেন।তাই নিজে কোনো জরুরি কাজে দেশের বাইরে গেলে,রোগীকে আনিস সাহেবের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দেন।

দেখতে দেখতে শুক্রবার এসে গেলো।গোসল করে দুপুর বারোটার দিকে আনিস সাহেব চকবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।চকবাজার শাহী মসজিদে নামাজ পড়ে,নাদিয়াদের বাসায় যাবেন।আনিস সাহেব ধর্মকে পুরোপুরি ফলো করতে না পারলেও,যতটুকু সম্ভব পালন করার চেষ্টা করেন।নামাজ শেষে আনিস সাহেব নাদিয়াদের বাসার দিকে রওয়ানা হলেন।পুরান ঢাকার সরু রাস্তা।দু'টো রিকশা একসাথে চলার জো নেই।বেশিরভাগ বাসাই বেশ পুরোনো ডিজাইনের।স্যাঁতসেঁতে শ্যাওলা পড়ে গেছে।বাসাগুলো একটার সাথে অন্যটা প্রায় ঘেঁষে আছে।খুব সম্ভবত,এরা এক ছাদ থেকে আরেক ছাদে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতে পারে।এতোকিছু ভাবতে ভাবতে,আনিস সাহেব নাদিয়াদের বাসায় চলে এলেন।খুঁজে পেতে অবশ্য খুব একটা বেগ পেতে হয়নি তার।পুরোনো ঢাকার বুকে বেশ বড় রাজকীয় স্টাইলের দোতলা বাড়ি।মেইন গেটের সামনে আসতেই,মোস্তাফিজ সাহেবের সাথে দেখা হয়ে গেলো আনিস সাহেবের।আনিস সাহেবকে দেখেই জড়িয়ে ধরলেন তিনি।
— আরেহ্ আনিস সাহেব,আসুন আসুন।আমার গরীবখানায় আপনাকে স্বাগতম।
— দয়া করে এভাবে বলে লজ্জা দিবেন না।কেমন আছেন আপনারা?নাদিয়া কেমন আছে?
— আমরা ভালোই আছি আলহামদুলিল্লাহ।নাদিয়া আগের মতোই আছে,স্যার। (আনিস সাহেবকে জড়িয়ে ধরেই হুহু করে কেঁদে উঠে) স্যার,আমার মেয়েটা কি কোনোদিন ভালো হবেনা?
— আহা,মোস্তাফিজ সাহেব।এভাবে ধৈর্য্যহারা হবেন না।খোদাতায়ালা চান তো,খুব শীঘ্রই নাদিয়া ভালো হয়ে যাবে।
— (দু'হাতে চোখ মুছতে মুছতে) স্যার,তাই যেনো হয়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মোস্তাফিজ সাহেব নিজেকে মানিয়ে নিয়ে আনিস সাহেবকে নিয়ে বাসার ভেতরে গেলেন।বাসার ভেতরে গিয়েই যেনো মোস্তাফিজ সাহেব বদলে গেলেন।শক্ত মেজাজী লোক যেমন হয়,ঠিক তেমন।তাকে দেখে কোনোভাবেই বোঝা সম্ভব না যে,একটু আগে তিনি হুহু করে কেঁদেছেন।পুরুষ মানুষ সম্ভবত এমনই।মোস্তাফিজ সাহেব ভালো করেই জানেন,তিনি ভেঙে পড়লে পুরো বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যাবে।তখন নাদিয়ার অবস্থা আরোও খারাপ হবে।তাই বাসায় তিনি এমন ভাব নিয়ে থাকেন,যেনো সবকিছুই স্বাভাবিক।

আনিস সাহেব নাদিয়াদের বাসার ড্রয়িং রুমে বসলেন।বিশাল ড্রয়িং রুমে ঢুকে আনিস সাহেব কিছুটা শৈশবে ফিরে গেলেন।ছোটোবেলায় বাবার সাথে কোনো আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে যদি বড় রুম দেখতেন,তাহলেই বাবাকে জিজ্ঞেস করতে,❝বাবা,এই রুমটা মাঠ হলে কি সুন্দর ক্রিকেট খেলা যেতো,তাইনা?❞ ছোট্ট আনিস সাহেবের এমন প্রশ্ন শুনে তার কম্যুনিস্ট বাবা সরলতার হাসি হাসতেন।পর্দা ভেদ করে নাদিয়াদের বাসার কাজের মেয়ে একটা ছোটো ট্রে তে করে দু'গ্লাস শরবত দিয়ে গেলো।যদিও শীতকাল,তবুও জুম'আর নামাজের পর ভালোই রোদ পড়েছে।আনিস সাহেবের ছোটোবেলায় নাকি শীতকালে দুই-তিনদিন পর সূর্যের দেখা মিলতো।সবই অবশ্য তার মায়ের কাছে শোনা।ছোটোবেলার নির্দিষ্ট কিছু ঘটনা বাদে,তেমন কিছুই আনিস সাহেবের মনে নেই।শরবত শেষ করার পর,নাদিয়ার বাবা আনিস সাহেবকে খাবার ঘরে নিয়ে গেলেন।ডাইনিং টেবিলের খাবার দেখে আনিস সাহেব অনেকটাই অবাক হলেন।ঢাকাইয়া মানুষ বেশ ভোজনরসিক,সেটা আনিস সাহেব জানতেন।তাই বলে এতোটা?হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি,লখনৌ বিরিয়ানি,খাসির তেহারি,কিমা পোলাও,সাদা পোলাও,মটর পোলাও,মোরগ পোলাও,খাসির লেগ রোস্ট,গরুর রেজালা,আস্ত মোরগ রোস্ট,বোরহানি,ফিরনি,ফালুদা,কুলফি,গোলাপজাম,শাহী টুকরা;কি নেই?বিয়ে বাড়িতেও কখনো এতো খাবারের আয়োজন দেখেন নি আনিস সাহেব।ভদ্রতার খাতিরে সবকিছু থেকেই একটু একটু করে নিয়ে আনিস সাহেব খাওয়া শেষ করলেন।খাওয়া শেষে হাত মোছার জন্যে আনা হলো রুমালি রুটি।আনিস সাহেবের মনে হলো,তিনি একদিনের জন্যে কোনো মোগল সাম্রাজ্যের সম্রাট বনে গেছেন।সামান্য বিশ্রাম নিয়ে আনিস সাহেব নাদিয়ার মায়ের সাথে কথা বলতে চাইলেন।বসার ঘরে নাদিয়ার মায়ের প্রবেশ,
— আসসালামু আলাইকুম,স্যার।
— ওয়ালাইকুমুস সালাম।কেমন আছেন?
— আলহামদুলিল্লাহ।স্যার,আপনি কেমন আছেন?
— আলহামদুলিল্লাহ।আচ্ছা,আমি কি আপনাকে কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে পারি?
— হ্যাঁ,পারেন।
— আপনাদের বাসায় কি রোজ রোজ এতো আয়োজন হয়?
— না স্যার,তবে দুই-এক পদের বিরিয়ানি সবসময়ই থাকে।ওর বাবার চৌদ্দপুরুষ এই খাবার খেয়ে আসছেন অতীতকাল থেকে।ঐতিহ্য হয়ে গেছে,আর কি।এগুলো না থাকলে ওর বাবা খুব রাগ করেন।
— আচ্ছা,নাদিয়ার সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন?মানে নাদিয়া আপনাকে ভয় পায়?নাকি সব কথা ফ্রেন্ডের মতো শেয়ার করে?
— ও আমাকে বন্ধু ভাবে,স্যার।সব কথাই বলে।
— আচ্ছা।ওর কি কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?কিছু মনে করবেন না,আজকাল এগুলো খুবই সাধারণ বিষয়।
— আমি যতটুকু জানি,ওর কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।
— ওর কি কোনো খারাপ স্মৃতি আছে,যেটা ও ভুলে যেতে চায়?
— আমরা খুবই সুখী পরিবার,স্যার।আমার জানামতে,ওর সাথে এমন কিছুই ঘটেনি।
— আচ্ছা।আপনার স্বামীর ভাষ্যমতে,নাদিয়া মনে করে ওকে অলৌকিক কিছু একটা এসে নির্যাতন করে।আপনি কি কখনো নাদিয়ার গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন লক্ষ্য করেছেন?
— আমি অনেকবারই ওর জামা খুলে আঘাতের চিহ্ন খুঁজেছি,স্যার।পাইনি।
— আচ্ছা,আপনাকে ধন্যবাদ।
— (শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে) স্যার,আমার মেয়েটা আবার আগের মতো ভালো হয়ে যাবে তো?
— হ্যাঁ,ইন শা আল্লাহ।আপনি দয়া করে সঞ্চিতাকে একটু আসতে বলুন।

চোখ মুছতে মুছতে নাদিয়ার মা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।কাঁদতে কাঁদতে বাসার সবাই ক্লান্ত।সবাই বলতে নাদিয়ার বাবা আর মা।একসময় মোস্তাফিজ সাহেবের বড় ভাই আবুল কালাম সাহেবও নাকি পরিবার সহ এ বাড়িতেই থাকতেন।পাঁচবছর আগে পুরো পরিবার সহ আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন।একটু পরেই সঞ্চিতা বসার ঘরে  প্রবেশ করলো,
— স্যার,আদাব।আমাকে ডেকেছেন?
— আদাব। হ্যাঁ,বোসো।দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করেছো?
— হ্যাঁ।আপনি?
— আমিও করেছি।আচ্ছা,নাদিয়ার সাথে তোমার পরিচয় কয় বছর ধরে?
— এইতো পাঁচ বছর হবে।ক্লাস সিক্সে ওর সাথে আমার প্রথম পরিচয়।এর কিছুদিন পর থেকেই আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড।
— নাদিয়ার আর কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড আছে? বা তোমার?
— না,স্যার।
— আচ্ছা,তুমিতো চাও যে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড আবারোও আগের সুস্থ্স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাক?
— হ্যাঁ স্যার,অবশ্যই।ক্লাসে গেলে ওকে খুব মিস করি।আগে সবসময় একসাথে থাকতাম।এখন শুধু ফোনে কথা হয়।মাঝে মাঝে আমিই চলে আসি ওকে দেখার জন্যে।
— নাদিয়ার কি কোনো ছেলেবন্ধু বা বয়ফ্রেন্ড আছে?
— না,স্যার।প্রেমের প্রস্তাব অনেকই পেয়েছে,কিন্তু কখনো কারো সাথে সম্পর্কে জড়ায়নি।আর,দু-একজন বাদে ক্লাসের মেয়েদের সাথেই ও ঠিকভাবে মেশে না।ছেলেবন্ধু তো দুরের কথা।
— আচ্ছা,নাদিয়া কি কখনো সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্টের স্বীকার হয়েছে?তোমাকে কখনো এমন কিছু শেয়ার করেছে?
— আসলে স্যার,একটা কথা আংকেল-আন্টি জানেন না।আমি অনেক আগেই নাদিয়াকে বলেছিলাম,আংকেল-আন্টির কাছে বিষয়টা বলতে।কিন্তু ও বলেনি।ওর কাজিন জিসান ভাইয়া ওকে প্রপোজ করেছিলো।কিন্তু,নাদিয়া তাকে শুধু ভাই হিসেবেই মেনে নিতে রাজি ছিলো।গতবছর যখন জিসান ভাইয়ার বড় বোনের বিয়েতে নাদিয়া গিয়েছিলো,তখন তাদের স্টোর রুমে নাদিয়াকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিয়ে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করতে চায়।নাদিয়া কোনোরকমে জিসান ভাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে।
— ওহ মাই গড!আর কোনো ঘটনা আছে,মা?
— নাহ্,স্যার।
— আচ্ছা মা,তুমি এখন এসো।আর,নাদিয়ার বাবা-মা কে এখানে আসতে বলো।কেমন?
— আচ্ছা,স্যার।

নাদিয়ার বাবা-মা সোফায় এসে বসেছেন।আনিস সাহেব একটা লাকি সুইচ ফ্লেভারের সিগারেট ধরিয়ে কথা বলা শুরু করলেন,
— আসলে,আপনাদের মেয়ের রাতের বেলা প্রচণ্ডরকম হেল্যুসিনেশন হচ্ছে।সে একটা মেন্টাল ট্রমার মধ্যে আছে।
— কিরকম মেন্টাল ট্রমা,স্যার?
— নাদিয়ার কাজিন জিসান ওকে পছন্দ করতো।জিসানের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায়,সে নাদিয়াকে তার বোনের বিয়ের দিন স্টোর রুমে কোনো এক বাহানায় ডেকে নেয়।পরে,সে নাদিয়াকে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করতে রাজি করানোর জন্যে ধস্তাধস্তি করতে থাকে।একপর্যায়ে,নাদিয়া কোনোরকমে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে।সেই ট্রমা থেকেই ও বেরিয়ে আসতে পারছেনা।বারবার কল্পনায় একই জিনিস দেখছে।
—যেই জিসানকে আমি আমার নিজের সন্তানের মতো আদর করে এসেছি।সেই জিসান এই কাজ করেছে?
— হ্যাঁ,বাস্তবতা এমনই।আর,আপনাদের বাসার একটা রেওয়াজে সামান্য পরিবর্তন আনতে হবে।
— কেমন পরিবর্তন? 
— এখন থেকে খাবারের মেনুতে মোগল খাবার কমিয়ে ফেলতে হবে।মোগল খাবার গুলোতে জায়ফল ব্যবহৃত হয়।এই জায়ফল নিয়মিত খাওয়ার কারণেই ওর হেল্যুসিনেশন এতো ঘন ঘন হচ্ছে।ও ভাবছে ওকে কেউ শারিরীক নির্যাতন করছে,ও অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করছে।মনে মনে কষ্টও পাচ্ছে।কিন্তু বাস্তবে কিছুই হচ্ছেনা।যার কারণে,নাদিয়ার মা ওর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাননি।
— এখন আমাদের কি কি করা উচিত,স্যার?
— আপনাদের উচিত নাদিয়াকে নিয়ে যতো বেশি সম্ভব সুন্দর সুন্দর জায়গায় ভ্রমণে যাওয়া।সম্ভব হলে সঞ্চিতাকেও ওর সাথে নিয়ে নিন।একসাথে সুন্দর সুন্দর সময় কাটানো।আমার সাথে চারটা কাউন্সিলিং করলেই হয়তোবা ঠিক হয়ে যাবে।আগে ঘুরে আসুন।
— (আনিস সাহেবকে জড়িয়ে ধরে) স্যার,আপনি আমার মেয়ের যে উপকারটা করেছেন।এরজন্যে,আজীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।একটা আবদার করবো,স্যার?
— হ্যাঁ,সম্ভব হলে আপনার আবদার রাখবো।
— আপনিও আমাদের সাথে ঘুরতে গেলে আমাদের খুব ভালো লাগবে,স্যার।প্লিজ আপনি না করবেন না।
— আমার তো বিশ্ববিদ্যালয় খোলা।ক্লাস চলছে।সামনে সেমিস্টার পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের।ওদের পরীক্ষা শেষ হলে নাহয়,আপনাদের সাথে ঘুরতে যাবো।
— আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ,স্যার।

অতঃপর,নাদিয়া আর সঞ্চিতার সাথে কিছুক্ষণ UNO খেলে আনিস সাহেব বাসার দিকে রওয়ানা হলেন।আজ যেনো তার এক যুদ্ধ জয়ের আনন্দ।একটা পরিবার কতোদিন পর আজ একসাথে আনন্দে ডিনার করবে।কারো উপকার করলে আনিস সাহেবের খুব ভালো লাগে।পুরান ঢাকার সরু রাস্তা ছেড়ে এসে আনিস সাহেব নিজের বাসায় এসে পৌঁছুলেন।আসতে আসতে প্রায় রাত হয়ে গেছে।ঢাকার রাস্তা,জ্যাম ছাড়া কি আর আসা যায়?এক ঘণ্টার রাস্তা প্রায় আড়াইঘণ্টা লাগলো।ঢাকার জ্যামকে কেনো এখনো পৃথিবীর অষ্টাশ্চর্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছেনা,তা নিয়ে একটা ডিবেট হতেই পারে। পোশাক পাল্টে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে তিনি রান্নাঘরে ঢুকলেন।আজ তেমন ভারি খাবার রাতে খাবেন না বলে মনস্থির করলেন।কারণ,নাদিয়াদের বাসার দুপুরের খাবারই এখনো হজম হয়নি।দু'টো ডিম সিদ্ধ আর এক গ্লাস গরম দুধ খেয়ে শুয়ে পড়লেন।শুয়ে শুয়ে আশফাক নিপুণের “মহানগর” সিরিজ দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছেন তা তিনি নিজেও জানেন না।স্বপ্নে তিনি দেখলেন নাদিয়ার বাবার বর্ণনার সেই জানোয়ারটা তাকে ঘায়েল করার জন্যে তার পেছনে ছুঁটছে।একপর্যায়ে,জানোয়ারটা একটা তলোয়ার তার দিকে ছুঁড়ে মারে এবং তলোয়ার তার পেট ভেদ করে বেরিয়ে যায়।একপ্রকার হাঁপাতে হাঁপাতে আনিস সাহেবের ঘুম ভাঙলো।জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতেই মাথার কাছে থাকা পানিপূর্ণ গ্লাস থেকে তিনি পানি খাওয়ার চেষ্টা করেন।কিন্তু তার হাত-পা যেনো অবশ হয়ে গেছে।তিনি তার ইচ্ছেমতো নাড়াতে পারছেন না।হঠাৎ করে তিনি তার কাঁধে একটা হাতের স্পর্শ অনুভব করেন এবং এক বিরাট অট্টহাসির পাশাপাশি শুনতে পান—
“কি আনিস সাহেব,এখন বিশ্বাস হয়?”