পোস্টস

প্রবন্ধ

বাবা- মা ও সন্তান ইস্যুতে কোন পক্ষ সঠিক?

২৫ এপ্রিল ২০২৪

তানবীর রহমান

মূল লেখক Tanbir Rahman

বাবা-মা ও সন্তানের দায়িত্ব-অধিকার নিয়ে একটা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যেটা ফুটবলার মোরসালিনের মায়ের দুই লাইনের একটা বক্তব্য পত্রিকায় আসায় সেটাকে আরো জলঘোলা করছে। এখন দেখতে পাই, এই ইস্যুতে তিনটি পক্ষ দেখা যায়। একপক্ষ মনে করে, বাপ-মা সমস্যাজনক, বিশেষ করে এই সমাজে তারা সঠিকভাবে সন্তানের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করেন না। আরেকপক্ষ মনে করেন, বাবা-মা ভুল কিছু করতে পারেন না, তারা যা করেন সবই সন্তানের ভালোর জন্য, সুতরাং তাদের দোষ দেওয়ার সুযোগ নেই। তৃতীয় আরেকটি পক্ষ আছে, যারা এই দুয়ের মধ্যেই সমস্যা দেখেন এবং প্রকৃত অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেন।

১.

মানুষের ন্যাচার কেমন এইটা আজও মানুষের কাছে রহস্যময়, কারণ মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণি। মানুষের চিন্তাভাবনা প্রত্যেকেরই আলাদা। প্রত্যেকের চিন্তার মধ্যে নতুনত্ব থাকে। সবাই আইনস্টাইন হবে না, হবে না টমাস এডিসনও কিন্তু মানুষের ইচ্ছের স্বাধীনতা আছে কি? দার্শনিক আলোচনা থেকে আমি মানুষের ইচ্ছের স্বাধীনতার পক্ষের সমর্থক। তবে হ্যাঁ, স্বাধীনতার মধ্যেও পরাধীনতা আছে, একটা সীমা আছে এটাও বিশ্বাস করি। 

তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন হলো, সন্তান জন্মের পর সেই সন্তানের ইচ্ছের স্বাধীনতা পরিবারে থাকা উচিত কি উচিত না? 

২. 

এই পৃথিবীতে কোনো সন্তানই নিজ ইচ্ছেতে জন্মায় না। তারা জন্মায় নারী ও পুরুষের মিলনে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, স্বাভাবিকভাবে সমাজে যা বাবা-মায়ের মাধ্যমে বলেই স্বীকৃত। 

প্রশ্ন হলো, যদি কেউ নিজ ইচ্ছেতে না জন্মায় বরং অন্য দুটো মানুষের ইচ্ছেতে ও কারণে দুনিয়ার মুখ দেখে সেক্ষেত্রে তাদের এই পৃথিবীতে আসার পর কি কি অধিকার থাকা উচিত? তারা কি অনাহারে সুবিধাবঞ্চিত হয়ে বেড়ে উঠবে নাকি এটা তাদের প্রতি অন্যায়? যে পরিবার নিজেরাই দরিদ্রতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাদের সন্তান লালন পালনের সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও সন্তান জন্মদান করা উচিত কিনা? 

এই প্রশ্নগুলো নিয়েই মূলত চিন্তা ভাবনা ও উত্তর খোঁজার মতো বিষয় চলে আসে। 

৩. 

এখন যে বিষয়ে তর্ক হচ্ছে সেটা হচ্ছে, সন্তান পালনে বাবা-মায়ের দায় আছে কিনা?

ওয়েস্টার্নের সাথে ইস্টের বাবা-মায়ের তুলনা দিয়ে ইস্টের বাবা-মায়ে দায়মুক্তি দেওয়ার কিছু কথাবার্তা দেখা যায়। কিন্তু বিষয় হলো এটা তুলনার কোনো বিষয় না। মূলত,  বাবা-মা যা করছেন সন্তানের সাথে যেটা পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক সেটা অন্যায় কিনা এবং কতটুকু সন্তানের বিকাশে প্রভাব ফেলে সেটাই আলোচ্য। 

ওয়েস্টে বাচ্চারা নিজেদের হাতে কাজকর্ম করে নিজেদের খরচ চালায় এজন্য তাদের তুলনায় এই অঞ্চলের বাপ-মা ভালো এই থিউরি একটা ভুল কনসেপ্ট। সেখানে বাচ্চাদের বাবা-মা যদি সন্তানের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন নাও করে তবে তার দায়িত্ব নেয় রাষ্ট্র। কাজের জায়গা করে দেয়, যা থেকে তারা সহজেই আয়ের সুযোগ পায়।

কিন্তু এই অঞ্চলে রাষ্ট্র কি এমন কোনো সুযোগ রেখেছে? যদি না রাখে তাহলে তাদের সাথে তুলনা দিয়ে এই অঞ্চলের বাবা-মা সঠিক অথবা তারা যা করছেন সেটা ভুল না, তারা দয়া করে সন্তানদের মানুষ করে এই আলাপগুলো ইনভ্যালিড। সন্তান জন্ম দেওয়ার পরই সন্তান বাবা-মা থেকে কিছু পাওয়ার অধিকার রাখে, যেটা রেসপনসেবলিটি, দয়া না।

৪.

সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের যেমন দায়িত্ব আছে তেমনি তারা তার সাথে কিছু পাওয়ারও অধিকার রাখে, প্রত্যাশা রাখে এটা ঠিক। কিন্তু সন্তানের বিকাশের জন্য বাবা-মায়ের ভূমিকা কি হবে? এই বিষয়টা সবার মধ্যে পরিষ্কার ধারণা নাই। ওয়েস্টার্ন কিংবা ইস্টের ধারণা বাদ দিলাম একজন শিশু ছোটবেলা থেকে তার ইচ্ছেমতো পরিবেশ থেকে শিখবে, এজন্য তাদেরকে তেমন পরিবেশ তৈরি করে দেয়া বাবা-মায়ের দায়িত্ব। যতক্ষণ সন্তান ভুল পথে পা না বাড়াবে ততক্ষণে তাদেরকে শাসন না করাই শ্রেয় তবে তারা নিয়মিত সন্তানকে পরামর্শ দিতে পারে। ভালো-খারাপের বিষয় শেখাতে পারে কিন্তু চাপিয়ে দিতে পারে না।

পৃথিবীর প্রতিটি ছেলেমেয়ে একই প্রতিভাব অধিকারী নন। তাদের ইচ্ছেও এক নয়। কারো নদী ভালো লাগে, তো কারো সমুদ্র, কারো লাগে আকাশ তো কারো পাহাড়। এজন্যই মানুষ ব্যক্তিভেদে ইউনিক। বড় হয়ে একজন শিশু কোন পথে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চায় সেটা তার প্রতিভা ও আগ্রহের ওপরই নির্ভরশীল। কাউকে জোর করে আপনি একদিন, দু'দিন একটা খাবার গেলাতে পারবেন কিন্তু এক সময় সে প্রতিবাদ করবেই এটাই সত্যি। চাপিয়ে দেয়ার সংস্কৃতি ভালো কিছু বয়ে আনে না।

তাই বাবা-মায়ের কখনোই উচিত না অবৈধ বা অনৈতিক কোনো কিছু না করলে সন্তানকে তার ক্যারিয়ার কোনদিকে যাচ্ছে সেটাকে বাঁধা দেওয়ার।

সুতরাং, একজন শিশুর ক্যারিয়ার কি হবে সেটা জন্মের আগেই দেখা যায় এই অঞ্চলের বাবা-মা ঠিক করে রাখেন, জন্মের পর তাদের ইচ্ছেই সন্তানের ইচ্ছে এমন মনোভাব পোষণ করেন। এটা পরিপূর্ণভাবে ভুল চিন্তা। বিশেষ করে বিশ্বায়নের এই যুগে সন্তানদের চেপে রাখার সংস্কৃতি কখনোই মঙ্গল বয়ে আনবে না।

৫.

এই অঞ্চলের বাবা-মা মনে করেন, সন্তানকে যে করেই হোক ডাক্তার ও প্রকৌশলী বানাতে হবে। কিন্তু তারপরে তাদের শখ জাগে, বিসিএস ক্যাডার হিসেবে সন্তানকে দেখার। কিন্তু কতজন বাচ্চা বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এই আশা পূরণ করতে পারে? সেটা সম্ভবও না। 

আবার, সন্তানকে জিপিএ ফাইভের পেছনে লেলিয়ে দিয়ে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের পছন্দের সাবজেক্টের শখের কথা মাথায় ঢুকিয়ে জীবন রোবটিক বানিয়ে দেওয়া বাবা-মাও তো আছেন। যেমন কয়েকদিন আগেই বুটেক্সে চান্স পাওয়া এক ছেলে কেন বুয়েটে চান্স পায়নি তাই বাবা মা তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। ছেলেটা দিনের পর দিন সেটা সহ্য করতে না পেরে সুইসাইড করে। এইটাকে সন্তানের ভালো চাওয়া বলে? 

বাবা-মা যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন তাদের ইচ্ছে পূরণ করতে গিয়ে কিছু ছেলেমেয়ে নিজেদের সত্তার কথাই ভুলে যায়। আবার সন্তানকে বিয়ে করানোর পর বাবা-মায়ের সেই দাম্পত্য জীবনেও নাক গলানো এই অঞ্চলেই তো দেখা যায়। দেখা যায়, এতে সংসারও ভাঙ্গে। এটাতে বাবা-মায়ের দায় নেই বলা যাবে? তাদের দায়মুক্তি দেয়া যাবে? 

৬. 

বাবা-মা সন্তানে শাসন করার অধিকার রাখেন। কিন্তু সেই অধিকার ফলাতে গিয়ে তারা যখন সন্তানের প্রভু হয়ে ওঠেন তখনই সেটা সমস্যাজনক। বাবা- মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক রক্তের বন্ধনের সম্পর্ক। তার মানে এই না সন্তানকে যেভাবে ইচ্ছে সেখাবে তারা ট্রিট করার অধিকার রাখেন। বাবা-মায়ের অপরাধের ভাগিদার যেমন সন্তানের নয়, তেমনি সন্তানের অপরাধের ভাগিদারও বাবা-মায়ের নয়। এ থেকেই বোঝা যায়, মানুষ মাত্রই এখানে স্বাধীন এবং তার নিজস্ব ব্যাপার।

৭.

যে সব বাবা-মা মনে করে তাদের অপূর্ণ ইচ্ছে তারা তাদের সন্তানের মাধ্যমে পূরণ করবে তাদের উচিতই না সন্তান জন্ম দেয়া। সন্তান সেটা পূরণ করতে ব্যর্থ হলে, তোর পেছনে এত টাকা ঢালছি কি এমনিতেই? আমার সব টাকা নষ্ট হলো, এমন বাণী সন্তান শোনার জন্য ঠেকা নাই। সন্তান জন্ম না দিলে ইনভেস্টমেন্ট এর দরকার নাই, বাচ্চা লালন পালন না করে সেই টাকা ব্যাংকে জমিয়ে রাখুক যাতে বুড়ো বয়সে সমস্যা না হয়। জন্ম দিছে বিধায় সমস্ত কিছু হালাল, এই থিউরি থেকে বের না হইতে পারলে সারাজীবন হাহুতাশ করতে হবে এমন যে, এই দেশ আগায় না কেন?

কিন্তু এই বাবা-মা সন্তানের জন্য কষ্ট করে টাকাপয়সা খরচ করেন সুতরাং তারা যা করবে তাই হালাল এই থিউরির জন্য যারা বলেন বাবা-মা যেহেতু জানপ্রাণ দিয়ে এতকিছু করছে সব নিঃস্বার্থ, তারা ভুল। এই পৃথিবীতে কেনো সম্পর্ক নাই যেখানে স্বার্থ নাই। এই বাবা-মাও চান একদিন সন্তানের সফলতা নিয়ে গর্ব করবেন, তাদের বৃদ্ধ বয়সে দেখভাল করবেন। এমন আশা করতেই পারেন কিন্তু সন্তান যদি আইনজীবী হয়ে আয়রোজকার করে  জীবনযাপন করতে চায় তাকে জোর করে ডাক্তার বানানোর চেষ্টা কেন করা লাগবে? সেটা নিয়া গর্ব করুন সমস্যাটা কোথায়? মূলত, এখানে বাবা-মা তাদের অপূর্ণ ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে বিপত্তি গড়ে তোলেন।

বাবা-মা কষ্ট করে কামাই করে সন্তান মানুষ করেন এটা সত্য। কিন্তু এই কষ্টের কারণও কি তারা নন? তারা নিজেরাই তো কষ্ট করতে চেয়েছেন। না হয় তো সন্তান জন্ম দেওয়ার দরকার ছিল না। সন্তান জন্ম না দিলে তো তাদের এই কষ্ট করার দরকার ছিল না।

একদল আছে, যারা বলে আগে বাবা-মা হও তারপর প্যারেন্টিং নিয়ে কথা বলো, ইনভ্যালিড যুক্তি। বিষয়টা তামিম ইকবালের খোড়া যুক্তির মতো। কেউ ক্রিকেটার না ক্রিকেটের সমালোচনা করতে পারবে না এইটা কোন গ্রন্থে লেখা আছে!

৮.

বাবা-মা কষ্ট করে দুনিয়ায় সন্তান লালন পালন করে, সুতরাং উভয়ের উভয়ের প্রতিই দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। সন্তানদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ছোটবেলা থেকে যে ভাবে হবে সেভাবেই পরবর্তীতে সে তার জীবন গড়ে তুলবে। এক্ষেত্রে বাবা-মা যদি তাদের সেভাবে গড়ে তুলতে পারেন, প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেন তাহলে এক সময় সন্তানও তার প্রতিদান দিবেন বলে বিশ্বাস। 

কিন্তু ব্যাড প্যারেন্টিং নাই, এই দেশের বাবা-মা যথেষ্ট ভালো বলে তারা এই বিষয়গুলো উড়িয়ে দেন, ডিপ্রেশন বলে কিছু নাই বলে যারা প্রচার করেন দেখা যায় এদের প্রায় অনেকেরই জীবনে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি কিংবা পরিবার থেকে যথেষ্ট সাপোর্ট পেয়েছে। আসলে মানুষের একটা স্বভাব হচ্ছে যতক্ষণে নিজে মাইনকার চিপায় না পড়ে ততক্ষণে তার হুশ হয় না।

এদেশের সব বাবা-মা খারাপ না, বাবা-মায়ের সব স্বভাব খারাপ না কিন্তু যেগুলো খারাপ সেগুলো নিয়ে কথা বলতেই হবে, সচেতনতা তৈরি করতেই হবে। ব্যাড প্যারেন্টিং নাই বলে এই বিষয়গুলো উড়িয়ে দিয়ে সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনের চিন্তা করা হাস্যকর। বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক কর্পোরেট জগতের মতো নয় এটা যেমন সত্যি, তেমনি এই সম্পর্ক মানেই প্রভু- দাসের মতোও নয় এটা মাথায় রাখা জরুরি।

৯.

বাবা-মা সন্তানের সবচেয়ে আপন। সন্তানকে যেমন সঠিক পথে পরিচালনা করতে উদ্বুদ্ধ করবেন তেমনি ওদের ইচ্ছেকেও ভালো চিন্তা হলে উৎসাহ দিবেন এমনটাই হওয়ার কথা। কারণ, মানুষ ছোট হোক কিংবা বড় তার ব্যক্তিগত ইচ্ছেতে প্রাধান্য থাকে তার নিজের প্রতিভা, কি তার ভালো লাগে। এটাকে যদি ঘষামাজার কাজ করা হয় তবেই সাফল্যের মুখ দেখা সহজ ও সম্ভবপর হয়। 

সবাইকে দিয়ে সবকিছু হয় না, যেমন মানুষ ডানা ছাড়া উড়তো  পারে না পাখির মতো। সব বাবা-মায়ের সন্তান সব বিষয়ে পারদর্শী হবে না এটাই স্বাভাবিক, কারো মানবসেবা করতে ভালো লাগতে পারে, কারো ভালো লাগতে পারে রোবট বানাতে, কারো লাগতে পারে অন্যকিছু। পৃথিবীতে কাজের তো শেষ নেই। 

আমাদের দেশে বাবা-মাকে সন্তান ভয় পেলে সেটাকে বাবা-মায়ের কৃতিত্ব হিসেবে দেখা হয়। তারাও গর্বের স্বরে বলেন তাদেরকে সন্তানরা ভয় পায় অথচ এই সংস্কৃতি খুবই খারাপ। খারাপ এ কারণে যে সন্তান তার মনের ভাব প্রকাশ করতে না পেলে ভুল পথে পা দিতে পারে, আত্মহত্যা করার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যখন এমন কিছু করে ফেলে তখন মায়াকান্না জুড়ে দেয় এই বাবা-মায়েরা। তখন তারাই বলে, এমন কেন করলি? আমরা কি ছিলাম না? আমাদেরকে বলতি। 

১০. 

আমার মনে হয় এদেশের বাবা-মায়েদের মধ্যে অনেক সমস্যা আছে, সবার মধ্যে না থাকলেও অনেকের মধ্যে আছে; যার মধ্যে শিক্ষিতরাই বেশি। এরা সন্তানকে মনে করে তাদের তৈরও করা রোটব বা দাস। তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে বাধ্য সন্তানরা। সন্তানদের ভালো শুধু তারাই বুঝেন, সন্তান নিজের ভালো নিজে বুঝেন না।

আবার এদেশের বাবা-মায়েরা কখনো তারা যে ভুল করতে পারেন এটা স্বীকার করেন না, করতে চান না। নেই তাদের স্যরি বলার বা অনুতপ্ত হওয়ার মতো মানসিকতাও। ভাবনা এমনই যে সব দোষ করে সন্তানরা অথচ এই বাবা-মায়েরা ভুল করে সন্তানের জীবনকে নরক বানিয়ে দিতে যথেষ্ট। অনেক ছেলেমেয়ে এই যুগেও আছে যারা বাবা-মায়ের এই অন্যায় কাজগুলোকে বৈধতা দেন। তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিষয়গুলোর কথা চিন্তা করে নস্টালজিক অনুভূতির কথা জানান, এটাও একটা ভুল।

যেকোনো ধরনের সুখে দুখে সন্তানরা চান বাবা-মা তাদের পাশে থাকুক কিন্তু বাবা-মা থেকে সাপোর্ট না পেলে তাদের মানসিকতা বিগড়ে গেলে কিংবা একটা সময় পাল্টা রিয়েকশন তাদের উপর শুরু করলে সেজন্য দায়ী কি শুধুই সন্তানরা? অবশ্যই দায় পরিবারের। প্রতিটি শিশুই নিষ্পাপ ও সৎ হয়ে জন্মায়। কিন্তু পরিবার ও সমাজ তাকে অসৎ হতে বাধ্য করে।

সুতরাং, ব্যাড প্যারেন্টিং নিয়ে যেমন প্রশ্ন তোলার সুযোগ আছে, তেমনি গুড প্যারেন্টিংয়েরও সচেতনতা তৈরি জরুরি। সমস্যাগুলো দূর হোক এটাই কামনা, মজবুত হোক বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক। 

লেখক সম্পর্কে

আমি তানবীর রহমান। পড়াশোনা করছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফি ডিপার্টমেন্টে। 

ফিলোসফির চর্চা করি। সেই সাথে সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব, রাজনীতি ও সমাজতত্ত্ব নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। চেষ্টা করি সমাজের সংস্কারের জন্য নিজের জায়গা থেকে কথা বলতে এবং মানুষের মাঝে নিজের ভাবনা জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে। বিশ্বাস করি নিজের জায়গা থেকে সচেতনতা ও কাজে তার বাস্তবায়ন সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ লিখি। কখনো ক্রীড়াজগত নিয়েও লেখা হয়। আমি স্বাধীনতাচেতা, যখন যা ভালো লাগে তা মনোযোগ দিয়ে করার চেষ্টা করি।

স্বপ্ন দেখি একদিন দেশটা 'সোনার বাংলাদেশ' হিসেবেই গড়ে উঠবে। মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। বাংলাদেশ প্রকৃত শিক্ষিত মানুষদের দেশ হয়ে উঠবে। সবাই তাদের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিতভাবে পাবে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য থেকে মুক্তি হবে। প্রভাবশালী লোকেদের দাসত্ব থেকে মুক্তি মিলবে খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষের।

আমার স্বপ্ন হয়তো-বা পূরণ হবে, হয়তো হবে না। কিন্তু স্বপ্নই আমাদের আশা হয়ে বাঁচতে অনুপ্রেরণা জোগায়।  সত্যের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
তানবীর রহমান তানবীর রহমান শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়