পোস্টস

সমালোচনা

সাহিত্য_হত্যা

২০ এপ্রিল ২০২৪

মো: নাইমুর রহমান

মূল লেখক মো: নাইমুর রহমান

অনুবাদক মো: নাইমুর রহমান

বইমেলা চলাকালীন সময়ে বই পড়ার গুরুত্ব এ ধরনের একটি আড্ডায় বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত মোটিভেশনাল স্পিকার ও লেখককে আমন্ত্রিত করা হয়েছিল। যিনি টাইপরাইটার বা কলম দিয়ে লিখতে পছন্দ করেন না। সফটওয়্যার এর মাধ্যমে যা লিখতে চান তা বলেন এবং এগুলোই প্রকাশিত হয়।  উপস্থাপনায় ছিলেন একজন উদীয়মান ফিকশন লেখক। তো আড্ডার একপর্যায়ে যখন সেই মোটিভেশনাল স্পিকারকে জিজ্ঞেস করা হলো যে তিনি কি ধরনের বই পছন্দ করেন এবং পড়েন? উত্তরে উপস্থাপক একজন ফিকশন লেখক জানার পড়েও তিনি মুখের উপরে বলে দিলেন তিনি ফিকশন পড়েন না ও পছন্দও করেন না। এগুলো পড়ে নাকি অর্থ উপার্জনে কোন কাজে আসে না। 
এমনিতেই উনাকে আগে থেকেই আমার কিছুটা বিরক্ত লাগতো। আর সেদিন উনার ব্যাবসায়ী টাইপ সাহিত্য বিবেচনার কথা শুনেই বুঝে গিয়েছিলাম তিনি কেন লিখেন।

এর পরে একপর্যায়ে আবার যখন বললেন বর্তমানে তিনি বেশি পরিমাণ বই বিক্রি নিয়ে স্টাডি করছেন এবং আগামীতে তিনি বেশি পরিমাণ বই কিভাবে বিক্রি করা যায় এ বিষয় নিয়ে লিখবেন। উনার মতে বই যাই হোক বিক্রির বাজার ভারী চাই। 

অনেকেই ফিকশন থেকে নন-ফিকশন বেশি ভালোবাসেন। এদের মধ্যে আমার পরিচিত কয়েকজন আছেন যাদের আমার অনেক ভালো লাগে। কারন তারা ফিকশন বাদ দিয়ে নন-ফিকশন এর প্রতি ঝুকে যাননি। তাদের মতে নন-ফিকশন মনকে ক্ষনস্থায়ী প্রভাবিত করে আর ফিকশন দীর্ঘস্থায়ী। এক্ষেত্রে লেখন ভিন্নতা থাকতে পারে। যেমন ফটিক, হৈমন্তি, বিলাসী, এগুলো আজীবন আমাদের মাঝেই থাকবে।
ইতিহাসভিত্তিক নন-ফিকশন নিঃসন্দেহে সবারই পড়া উচিৎ। এগুলো ধারন করাও জরুরী। 

মোটিভেশনাল স্পিকারদের নন-ফিকশন অল্প কয়েকজন ছাড়া বেশিরভাগদের ক্ষেত্রেই আমার এরকম মনে হয় যে হাতে টাকাপয়সা হলে মুখে কথা এমনিতেই ফুটে।
আবার তারা নিজেদের অত্যন্ত সুখি দাবী করেন যার কিছুদিন পরপরই তাদের নামে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ সংবাদ প্রকাশ হয়।
আমার কাছে অন্যতম একটি হাস্যকর মোটিভেশান হচ্ছে 
"হুচোট খেতে খেতেই একদিন তুমি উঠে দাঁড়াবে। উপরে  উঠতে হলে অবশ্যই তোমাকে হুচোট খেতে হবে" 
আচ্ছা মেনে নিলাম। এবার আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমি যদি গভীর নলকুপের ধারে গিয়ে সেই হুচোট খাই?
প্রায় মোটিভেশনাল স্পিচ একটি আরেকটির সাথে জোড়া লাগেনা। 
একজন বলে, যাই হোক মেনে নাও তো আরেকজন বলে মেনে নিওনা।
এখন পর্যন্ত এদের মধ্যে যে স্পিচটি সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে তা হচ্ছে The Shawshank Redemption মুভির 
"Get busy living or get busy dying"
যাই হোক মুল বিষয় থেকে হয়তো বের হয়ে যাচ্ছি। 
কথা হচ্ছে শুধু মোটিভেশনাল স্পিকার হলে ভিন্ন কথা তবে যারা অন্তত লেখালেখি করে সাহিত্যের বারান্দায় আসছেন তাদের আরেকটু বিনয়ী ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন।  ব্যাবসায়ীক ভাবধারায় লিখালিখি করলে আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস স্যারই হতেন দেশের ধনী লেখন। আহমদ ছফা এদের কথা বাদই দিলাম। অবশ্য রকমারি যখন সেরা লেখকের সার্টিফিকেট দেয় সেখানে আর সাহিত্যের দোহাই দিয়ে লাভ নাই। স্পোকেন ইংলিশ এর সাহায়ক প্রতিষ্ঠান এখন বইমেলা।
নন-ফিকশন এর ১০ টি মোটিভেশনাল বই না পড়ে মহিউদ্দিন আহমেদ এর দু-একটা বই পড়ুন। এগুলোই হচ্ছে নন-ফিকশন। যারা পড়লে দেশকে আরেকটু পেছন থেকে চেনা যায়।
বই পড়া শুরু করার আগে একজন ভালো বই পাঠককে ফলো করা জরুরী। ছাইপাঁশ না গিলে কিছু না গিলাই ভালো। 
ব্যাবসায়ীক উদ্দেশ্যে বই বিক্রি বন্ধ হোক।