পোস্টস

নিউজ

সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন যেসব নারী

৮ মার্চ ২০২৪

নিউজ ফ্যাক্টরি

Featured Image
নোবেল পুরস্কার সাহিত্য জগতের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ১৯০১ সাল থেকে সাহিত্যে নোবেল দেওয়া শুরু হয়েছে। নোবেলপ্রাইজ. অর্গ এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ১২০ জন লেখককে সাহিত্যে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ১৭ জন নারী লেখক মর্যাদাবান এই পুরস্কারটি পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ফিকশন ফ্যাক্টরির পক্ষ থেকে নোবেলজয়ী নারী লেখকসহ সকল নারীদের প্রতি সম্মান জানাচ্ছি। সাহিত্যে নোবেল পাওয়া নারী লেখকদের তালিকা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।       

১. অ্যানি এরনো:      

ফরাসি কথাসাহিত্যিক অ্যানি এরনো ২০২২ সালের সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ জিতেছেন। ফ্রান্সের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী যিনি মর্যাদাবান এই পুরস্কারটি পেলেন। ৮৩ বছর বয়সী এই লেখক ৫ দশকের বেশি সময় ধরে লেখালেখি করে ২০টির বেশি বই প্রকাশ করেছেন। এই বইগুলোতে তিনি নির্ভীকভাবে যৌনমিলন, অসুস্থতা, বার্ধক্য এবং মৃত্যুর মত জীবনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মুহুর্তগুলো গভীরভাবে অনুসন্ধান করেছেন। 

২. লুইস গ্লিক :   

২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান মার্কিন কবি এবং প্রাবন্ধিক লুইস গ্লিক। তিনি পুলিৎজার, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, দ্য ওয়াইল্ড আইরিশ, ভিটা নোভা, অ্যাভের্নো। 

৩. ওলগা তোকারচুক:         

পোল্যান্ডের লেখক, সমাজকর্মী, নারীবাদী এবং বুদ্ধিজীবী ওলগা তোকারচুক ২০১৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ৬২ বছর বয়সী এই লেখক ২০১৮ সালে তার ফ্লাইট উপন্যাসের জন্য ইন্টারন্যাশনাল বুকার প্রাইজ পান। দ্য বুকস অব জ্যাকব উপন্যাসকে তোকারচুকের শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে অভিহিত করা হয়। নোবেল কমিটি এটিকে তার ম্যাগনাম ওপাস বা মহৎ কর্ম বলে উল্লেখ করেছে। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, দ্য বুকস অব জ্যাকব, ড্রাইভ ইয়োর প্লো ওভার দ্য বোনস অব দ্য ডেড, দ্য লস্ট সোল। 

৪. সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ:    

বেলারুশের অনুসন্ধানী সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ ২০১৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তার লেখাকে দুর্ভোগের স্মারক এবং সময়ের সাহসী লেখনী বলে উল্লেখ করেছে নোবেল কমিটি। তিনিই বেলারুশের প্রথম লেখক যিনি সম্মানজনক এই পুরস্কার পেয়েছেন। ভয়েস ফ্রম চেরনোবিল তার সাড়া জাগানো একটি বই। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়া কয়েকশ নারীর সাক্ষাতকারের উপর ভিত্তি করে তিনি লিখেছেন, 'দ্য আনউইমেনলি ফেস অব ওয়ার: অ্যান ওরাল হিস্ট্রি অব উইমেন ইন ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু'।     

৫. অ্যালিস মুনরো:       

কানাডার ছোট গল্পকার অ্যালিস মুনরো ২০১৩ সালে নোবেল পান। ৯২ বছর বয়সী এই লেখককে সমসাময়িক ছোট গল্পের গুরু বলে উল্লেখ করেছিল নোবেল কমিটি। ২০০৯ সালে তিনি ইন্টারন্যাশনাল বুকার প্রাইজ পান। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, ডিয়ার লাইফ, লাইভস অব গার্লস এন্ড উইমেন, ‘হেটশিপ, ফ্রেন্ডশিপ, কোর্টশিপ, লাভশিপ, ম্যারিজ’, ড্যান্স অব দ্য হ্যাপি শেডস। 

৬. হার্তা মুলার:     

রোমানিয়ান বংশোদ্ভূত জার্মান উপন্যাসিক, কবি এবং প্রাবন্ধিক হার্তা মুলার ২০০৯ সালে নোবেল পুরস্কার পান। ৭০ বছর বয়সী এই লেখকের বই ২০টির বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, দ্য হাঙ্গার এঞ্জেল, দ্য ল্যান্ড অব গ্রিন প্লামস, দ্য ফক্স ওয়াজ এভার দ্য হান্টার।

৭. ডোরিস লেসিং:  

ব্রিটিশ উপন্যাসিক ডোরিস লেসিং ২০০৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পান। সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে ৯৩ বছর বয়সে তিনি এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি পরমাণু অস্ত্র এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, দ্য গোল্ডেন নোটবুক, দ্য গ্রাস ইজ সিংগিং, দ্য ফিফথ চাইল্ড।

৮. এলফ্রিডে ইয়েলিনেক:   

অস্ট্রিয়ার নাট্যকার এবং উপন্যাসিক এলফ্রিডে ইয়েলিনেক ২০০৪ সালে নোবেল পান। তার সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস হচ্ছে 'ডি ক্লাভিরস্পিলারিন'। বিশ্বজুড়ে এটি 'দ্য পিয়ানো টিচার' নামে সুপরিচিত। তার উল্লেখযোগ্য অন্যান্য বই হলো, উইমেন এজ লাভার্স, গ্রিড, লাস্ট, ‘ওয়ান্ডারফুল, ওয়ান্ডারফুল টাইমস’।    

৯. উইসলাওয়া সিমবোরস্কা:  

পোলিশ কবি, প্রাবন্ধিক এবং অনুবাদক উইসলাওয়া সিমবোরস্কা ১৯৯৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান। নোবেল পাওয়ার পরেই বিশ্বজুড়ে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। তার বই ইংরেজি ছাড়াও আরবি, হিব্রু, ফার্সি, জাপানি, চীনা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, নাথিং টুয়াইস, হেয়ার, ভিউ উইথ অ্যা গ্রেইন অব স্যান্ড।

১০. টনি মরিসন:   

মার্কিন উপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, সাহিত্য সম্পাদক টনি মরিসন ১৯৯৩ সালে নোবেল পান। তার প্রথম উপন্যাস দ্য ব্লুয়েস্ট আই ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয়। বিলাভড উপন্যাসের জন্য তিনি পুলিৎজার পুরস্কার পান। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, সং অব সলোমন, সুলা, জ্যাজ, হোম, প্যারাডাইস, গড হেল্প দ্য চাইল্ড।

১১. নাদিন গর্ডিমার:       

দক্ষিণ আফ্রিকার লেখক, রাজনৈতিক কর্মী নাদিন গর্ডিমার ১৯৯১ সালে নোবেল পান। তার অসামান্য মানবতাবাদী সাহিত্যকর্মের জন্য এই পুরস্কার পান তিনি। ১৯৭৪ সালে তিনি ম্যান বুকার প্রাইজ পান। তিনি বর্ণবাদবিরোধী নেত্রী ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, বার্গারস ডটার, জুলি’স পিপল, মাই সন্স স্টোরি।  

১২. নেলি শ্যাকস:   

জার্মান-সুইডিশ কবি, নাট্যকার নেলি শ্যাকস ১৯৬৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, গ্লোয়িং এনিগমাস, দ্য সিকার এন্ড আদার পোয়েমস, ও দ্য চিমনিস।  

১৩. গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল:   

লুসিলা গোদোয় আলকায়াগা'র ছদ্মনাম গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল। চিলির এই কবি, কূটনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও নারীবাদী ১৯৪৫ সালে নোবেল পান। দক্ষিণ আমেরিকার কবিতায় আধুনিকতার সূচনা যাদের হাতে, তাদের অন্যতম তিনি। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, ডেসোলেশন, রোনদাস ডি গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল, দিস আমেরিকা অব আওয়ারস।   

১৪. পার্ল এস.বাক:       

আমেরিকান উপন্যাসিক পার্ল এস. বাক ১৯৩৮ সালে নোবেল পান। তার উপন্যাসে চীনের কৃষিজীবনের সমৃদ্ধ ও মহাকাব্যিক যে বর্ণনা দিয়েছেন, তার জন্য পুরস্কারটি দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে নোবেল কমিটি। তার লেখা ‘দ্য গুড আর্থ’ উপন্যাসটি ১৯৩১ এবং ৩২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বেস্টসেলার বই ছিল। এটি পুলিৎজার পুরস্কার পায়। তিনিই সাহিত্যে নোবেলজয়ী প্রথম মার্কিন নারী। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, ইস্ট উইন্ড: ওয়েস্ট উইন্ড, সন্স, প্যাভিলিয়ন অব উইমেন, ড্রাগন সিড।      

১৫. সিগ্রিড উন্দসেট:                 

নরওয়ের উপন্যাসিক সিগ্রিড উন্দসেট ১৯২৮ সালে নোবেল পুরস্কার পান। মধ্যযুগে নরওয়ের মানুষের জীবনের শক্তিশালী বর্ণনা সাহিত্যের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য তাকে এই পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল নোবেল কমিটি। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, ক্রিস্টিন ল্যাভর‍্যান্সডেটার, দ্য ব্রাইডাল রেথ, জেনি, দ্য ক্রস।     

১৬. গ্রাৎসিয়া দেলেদ্দা:    

ইতালিয়ান লেখক গ্রাৎসিয়া দেলেদ্দা ১৯২৮ সালে নোবেল পান। তিনি প্রথম ইতালিয়ান নারী হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পান। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, লা মাদরে, রিডস ইন দ্য উইন্ড, অ্যাশেজ, অনেস্ট সোলস।

১৭. সেলমা লাগেরলফ:                        

সুইডিশ লেখক এবং শিক্ষয়িত্রী সেলমা লাগেরলফ ১৯০৯ সালে প্রথম নারী হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পান। ৩৩ বছর বয়সে গোস্টা বার্লিংস সাগা নামে প্রথম উপন্যাস প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, দ্য ওয়ান্ডারফুল অ্যাডভেঞ্চারস অব নিলস, জেরুজালেম, দ্য এমপেরর অব পর্তুগালিয়া।  

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া