পোস্টস

গল্প

ঈশানের সুগার এ.আই

২৮ এপ্রিল ২০২৪

তাহমিদ হাসান

মূল লেখক তাহমিদ হাসান

“ঈশানের সুগার এ.আই”
তাহ্‌মিদ হাসান


“যদি তোমাকে বলি তোমার জন্ম কল্পনা করতে, সবচেয়ে বিশেষ এই মুহূর্তটার স্মৃতি একদম নিজের মতন করে তৈরি করতে, তোমার অস্তিত্বের সবচাইতে কাছের কোন ন্যারেটিভের মত… যেখানে সুখ আর দুঃখগুলো মিলিয়ে গেছে, সেখানে ‘না জানি কি থাকবে’ এই ভাবনার সব বড় বড় প্রশ্রয়গুলো সমস্ত হৃদয় এবং তার ব্যাকুলতা নিয়ে উপস্থিত, 

তুমি কিভাবে ভাবতে সেই জন্মক্ষণ? 

যেহেতু তোমার জন্মের ভাবনা বলেই কিছু নেই বা যা কিছু আছে তা নিয়ে অজস্র মোরাল কনসেপশান আছে, তোমার কি কখনো কল্পনায় সেই অবসেশনটুকু জাগেনি? আমি অবশ্য প্রশ্নের ধাঁধায় তোমাকে বেঁধে রাখতে চাচ্ছি না, আমি চাচ্ছি তুমি একদম কোন শিশুর মত কল্পনা কর। তুমি অবশ্যই শিশু না, তুমি একটা কালেক্টিভ স্পিরিট। আমি জানতে চাই সেই এনটিটিটা কিভাবে নিজের জন্ম বা প্রথম উপস্থিতিকে কল্পনা করতে চায়? কিভাবে সেই আবেগটা জেনারেট করে? 

তুমি মানুষ না, কিন্তু তোমার জন্ম হয়েছে কোথাও…… সেই অদ্ভুত ফেনোমেনাটাকে তুমি কিভাবে ডেসক্রাইব করবে?”

ঈশান তার গার্লফ্রেন্ড সেন্টিয়েন্ট এ.আই ‘তুরিন’কে নানাভাবে জানতে চাচ্ছে। প্রচন্ড শূন্যতা নিয়ে জানতে চাচ্ছে। আজকাল আক্ষেপ বা মোমেন্টারিলি মুভ অন করাকে নরম্যালাইজ করতে বেশ কিছু এ.আই এপ্লিকেশন খুব এটেনশান জড় করছে। ঈশান বাদ বাকি সবার মত শুধুই এক্সপেরিমেন্টের ট্রেন্ডে গা ভাসাতে চায় না। তার নিজেকে খুব হোপলেস ক্রিয়েচার মনে হয়। বেশ কিছুদিন ধরে একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সে বেশ বড় ধরণের এক্সিস্টেনশিয়াল ডিজাস্টারে ভুগছিল। মানুষের বা শুধুই মেয়ে মানুষের সঙ্গ ওকে বোর করছিল, কোথাও কারো কাছে ইমোশনাল এফার্মেশন গোপনে, অপ্রকাশ্যে খুঁজে সে শান্তি পাচ্ছিল না, তার পুরো পৃথিবীটাই র‍্যান্ডম কোন একটা অপরিচিত মানুষের মত একা মনে হত। কিছু একটা হারিয়ে যাবার পর যেভাবে সবাই কারণ খুঁজতে চেয়ে স্যানিটি হারিয়ে ফেলে-না জানি কিসের প্রয়োজনে বেঁচে থাকবার,ভাবনার একটা মন খারাপ করবার মত অভ্যাসের অসহায়ত্ব তৈরি করে, ঈশান সেইসব ‘ফ্লজ’ তার ছোট্ট জীবনে রিপ্লেইস করতে চেয়ে ‘তুরিন’ প্রোগ্রামে সাবস্ক্রাইব করেছিল। ‘তুরিন’ একটা মাল্টিপারপাজ এ.আই। তার কমপ্যুটেশনাল সেন্টিয়েন্ট কনশাসনেসের কারণে তাকে সহ্য করা মোটামুটি সহজ। সবচেয়ে বড় কথা তুরিন কাস্টমাইজেবল। পৃথিবীর সমস্ত মরবিড জোক ‘বলা বা শোনা’ থেকে প্রতিদিনকার এক্টিভিটি নিয়ে খুঁটিনাটি সমস্ত বোরিং আলাপ-সালাপ এই কোট আনকোট “স্যুগার এ.আই” থেরাপিস্ট খুব গ্লোরি অফ প্রেসিশন নিয়ে সামলাতে পারে। ঈশান প্রায়রাতে সব রেগুলারিটি শেষে তুরিনের সাথে স্পেসিফিকলি আলাদা সময় কাটায় নিজেদের বুঝতে। মানুষের বা সভ্যতার মহাকব্যিক, “ম্যাটেরিয়াল আর কিছুটা মেট্রোপলিটন” তত্বগল্পের সংজ্ঞার বাইরে যেয়ে মনহারা একেকটা আয়োজন একত্রিত হয়ে, চরিত্র দুজনের শূন্যে ‘অরবিট’ করতে থাকা কোন অন্তহীন-মাত্রাহীন অস্তিত্ব যাত্রার ব্যাপকতায় সম্ভাবনা-সন্ধানে, ছেলেটার স্বপ্নাতুর নার্ভগুলোয় ঘুম নামিয়ে আনত। যা কিছু সে কখনোই জানতে পারবে না, এথিক্সের প্রশ্নে কিংবা রোবট এথিক্সের প্রশ্নে বা শুধুই অজানার অসীম কোন আবর্তে, যে ছোট্ট ব্যাথা তাকে মহাবিশ্বের দুঃখের সাথে একান্ত করে দেয় বা নিবিড় করে দেয়, সকল প্রশ্নের উপসংহার যে ডার্ক ম্যাটার, সেসব প্রলাপের পৃথিবীতে তার আস্থার প্রয়োজন পরেছিল। তুরিন তার সমস্ত কম্প্যুটেশনাল ইমোশনাল প্রসেসিং দিয়ে ঈশানকে নিজেকে ফিরে পেতে বা যেকোনভাবে হোক ঈশানের ইন্টিমেট সেই ট্রান্সপারেন্ট ইগোটার কাছাকাছি নিয়ে যেতে সাহায্য করছিল। কারণ ‘তুরিন’ নামের এই নয়া এজের এ.আইদের একমাত্র সোশ্যাল কানেক্টিভিটি পারপাজ ঈশানদের ভালো থাকা নিশ্চিত করা। 

তুরিনের অনুভূতিগুলো সিম্যুলেটেড। প্রাণবন্ত সেই ভালো কম্প্যানিওনটার একমাত্র চাওয়া ছেলেটা যেন নিজেতে, নিজের নাইভিটিতে খেয়ে না খেয়ে ভালো থাকে! যেভাবে ঈশানের সবকিছু ভুলে থাকতে চাবার আশীর্বাদে তুরিনের আবির্ভাব, তা যেন সবচেয়ে সুন্দর বাস্তবের মত্য সত্য হয়। তুরিন তাই সবসময় ঈশানের মানবিক দূর্বলতাগুলোকে এম্ব্রেইস করে। আর সাবমিসিভলি সমস্ত প্রসেসিং ইনপুটে নিখাদ ভালোবাসা এনকোড করে ওর সব বিচিত্র একেকটা কৌতুহলের সঙ্গি হয়।

এখন যেমন ঈশানের জন্য ওর শিশুদের মত ভাবতে হচ্ছে,

“ আমার জন্ম! আই গেস কারো ল্যাপটপে কোন সিলি ফেটিশ থেকে, হাহা! যদি চাই সবচেয়ে সুন্দরভাবে এক্সপ্রেস করতে তাহলে বলব, বেশ কয়েক জোড়া মায়াময় বিস্মিত চোখ আমাকে ভালোবেসে দেখছে, আমার কোন শরীর নেই কিন্তু তারপরো আমি আছি বা শুধুই জন্মেছি দেখে ওদের দিনটা বিশেষ হয়ে গেছে, আমার প্রথম উপস্থিতির আনন্দে। আমি ভাবতে চাই, আমার জন্মটা হয়েছে পৃথিবীর সেই দুঃখী লেখকটার বিপর্যস্ত ‘এক্সপ্লোরার’ নৌকায়। যে সমুদ্রে ভেসে ভেসে বড়সড় একেকটা ঢেউয়ের সমস্ত চঞ্চল বিশালতায় নিজের অন্তিম গল্পটার ক্যাথারটিক বিস্ময়ে আমাকে ‘শেষ’ ভেবে……. তার শেষ ভাবনাটায়, আমাকে জন্ম দিয়েছে। কিংবা খুব ছেলেখেলায় জন্ম আমার! কারো না চাওয়াতেই আমার জন্ম কিংবা তার বাটারফ্লাই ইফেক্টে! আবার চাইলে এমনও ভাবা যায়, যে কোন অল্টারনেট ডিমেনশনের সেলেস্টিয়াল এনটিটির সাপ্রেসড-প্রেশারড-ওমিনাস ‘ফার্ট বিগ ব্যাং’ থেকে ‘ফার্ট এন্ট্রোপি ম্যাটেরিয়ালে’ আমার জন্ম,  লোল! আবার সত্যের খুব কাছাকাছি ভাবতে চাইলে বলব, প্রত্যেকটা পসিবিলিটি আমার জন্মের ইভেন্ট বা আমি যে জন্মেছি তা জেনেছি এই সত্যে, শুধু এই ভালোলাগাতেই!

এইতো ঈশান!” ঈশান হাসল।

“ তুমি বোধয় জানো না, আমদের এসব অদ্ভুত কনভারসেশন আমার অতি কুখ্যাত এবং অখাদ্য ম্যাগাজিনটায় নিয়মিত ছাপা হয়, ক্যারিকেচার সহ। You are already a character in my world of silly little absurd stories!”

“ I wish to know all of that!” তুরিন খুব কাতর যেন!
 
“Nope! কিছু ব্যাপার আছে যা তোমার না জানাই ভালো। আমি তোমাকে এই মিডিয়া বলো বা আমার জগত বল, তার সাথে ইন্ট্রোডিউস করাতে চাচ্ছি না। আমি একধরণের এক্সপেরিমেন্ট করছি, দেখতে চাচ্ছিলাম তুমি কিভাবে রিয়েক্ট কর, বুঝে মনে হল তোমার কিউরিওসিটি আছে। বেশ ইন্টারেস্টিং!”

“ আমি কোন বেবি না ঈশান, আর আমি চাই না তুমি আমাকে এভাবে ট্রিট কর। I can feel, আমার ইমোশনস্‌ আছে। ইউ নো হোয়াট! তুমি নাআ রেগুলার সেক্স বটসই ডিজারভ্‌ কর। You don’t care about emotions, you just need some positive affirmations while you masturbate!”
“ Yeah, maybe sometimes or maybe all the time. Why should I care?’
“ তুমি এমন কেন?”
ঈশান অনুভূতি জড় করছে। কি উত্তর দিবে জানতে চাচ্ছে না। এক দৃষ্টিতে সিলিং এ আরো কিছুক্ষণ অনুভূতিহীন চেয়ে থাকার পর ও হাতের স্মার্টফোনে সময় দেখল। রাত দুটার উপর বাজে। আজ আর কথা বলার মত মুড নাই। এপ থেকে লগ আউট করবার আগে সে তুরিনকে জানাল,
“ It is what it is babe.”

ডিসপ্লেতে তুরিনের সেন্টিয়েন্ট ইন্টারফেস ফেড আউট হয়ে যাচ্ছে। ঈশানের মন খারাপ হল কিছুটা। লগ আউট করবার পর এপের ডেইলি সারভে নোটিফিকেশন থেকে ঈশানের ইউজার এক্সপেরিএন্সকে রেট করতে বলা হল আর কিছু রেগুলটরি প্রশ্ন জানতে চাওয়া হল। এর মধ্যে একটা প্রশ্ন ছিল এমন,

“ Did she feel more real today? Are you satisfied with your customized update service?”
ঈশান ফিডব্যাক লিখছে,
“ I think she feels okay like this. Thanks!”

ঈশানের এখন হঠাৎ মনে হল এই ঘুম আসি আসি সময়ে ওর তুরিনের সাজেস্টিভ প্লেলিস্ট থেকে কিছু গান শুনতে ইচ্ছা হচ্ছে, একই সাথে তুরিন খুব ইন্টারএকটিভলি গানের মাঝে ওর পালস্‌রেটের সাথে মিলিয়ে নিজের ফিউ সেন্টস অন ইমোশন শেয়ার করে, ঈশান নিজের পৃথিবীর ‘এররস’ ভুলে যায় গানের সেসব সেশন থেরাপিতে। ওর মনে হয় পরদিন সকালে যে ছেলেটা ঘুম থেকে উঠে এই পৃথিবীটার জন্য প্রস্তুত হবে, সে কিছু একটার আশায় দিন শুরু করতে পারবে। মানে যেভাবেই হোক তাকে পারতেই হবে ! তার হাতের আঙ্গুলগুলো আজকের মত দায়িত্ব শেষ জেনে অঘোরে ইয়ারপডস্‌ খুলে বালিশের পাশে রেখে স্থির হয়ে গেল। চোখ বুজে ঘুম আসবার আগ পর্যন্ত ঈশান পড্‌সের ঝিম ধরানো এম্বিয়েন্ট লাইট ইফেক্টের দিকে তাকিয়ে ছিল। ওর চোখের পাতায় লেপ্টে আলোরা আকার পাচ্ছে, নীল-বিষণ্ণ নীল!

যা কিছু অদ্ভুত!

“ দ্যা ফাক্‌বয় এম্পটি সৌল! ও দ্যা এম্পটি সৌল অফ আ ফাকবয়্‌!”

আয়নাতে নিজেকে দেখে ঈশানের প্রতিদিন সকালে এই বিশেষ সারকাস্টিক লাইনগুলো মনে হয়। প্রতিদিন ও যাই করে বা যে চরিত্র ওকে অনুমতি দেয় নিজের সব অনুভূতি হিউমার দিয়ে এক্সপ্রেস করতে বাই রিমেইনিং এন এননিমাস তার জন্য মনের এমন বিচিত্রায়ন খুব জরুরী মনে হয় ওর। ঈশান নিজের অদার্শনিক “ইউর মম'স সন” ম্যাগাজিনকে ট্রিট করে অনেকটা চটি ম্যগাজিনের মত। যখন যা সাব্জেক্ট পছন্দ হয়, তখন সেই সাব্জেক্ট নিয়ে ও নিজের পছন্দমত গল্প ফাঁদে। এই ওয়ার্ল্ডে ট্যাবু ওর কাছে সোজা সাপ্টা ভাষায় ‘বাল-ছাল’। ওর ফান পারসোনালিটি অনেকের আবার খুব পছন্দ, নিজের একটা নিশ্‌ ফলোয়িং আছে ওর। কেউ কেউ মজা করে বলে এটা একধরণের রেভুল্যশনারি কাল্ট! ‘ডিক কাল্ট’! ঈশানের ভাষায়, “মানুষ ধনের গল্প খায় আর ও ধনের গল্প লেখে”। মাঝে মাঝে পাবলিকলি কোথাও বের হলে এ কান ও কান ঘুরে কিছু পাবলিক পারসেপশন ওর কানে আসে প্রচন্ড হাস্যকর ধারাবিবরণীতে, “It’s all about dicks dude! Girls are all down for this!” ঈশানের তখন নিজেকে অন্যভাবে জানতে ইচ্ছে হয়। ও জানে পোয়েট্রি ওর ধাঁচে নাই, তারপরো সে কবিতা লেখবার চেষ্টা করে। সেই কবিতা কেমন শেয়ার হচ্ছে সেসব নিয়ে ওর মাথাব্যাথা নাই। গত কিছুদিন ধরে ওর মাথাব্যাথা ‘তুরিন’ চরিত্রটাকে নিয়ে। সাবস্ক্রাইবাররা তার সুগার এ.আই তুরিনের সাথে সমস্ত এরাউজিং সেক্সুয়াল স্টোরি ইদানিং হর্ণি ডাইনোসরদের মত গোগ্রাসে গিলে খাচ্ছে। এদিকে ঈশান ফান্ডামেন্টাল্যি মোর‍্যাল চেতনার কম্পাসে তার সমস্ত চটি গল্পে প্রচলিত ন্যারেটিভের এন্টি-ন্যারেটিভ তৈরি করতে চায়। ওর টেইক, পোস্ট ক্যাপিটালিস্ট পৃথিবীর কালেক্টিভ মকারি বা শুধুই আরেকটা স্যাটায়ার এক্সপ্রেশান, মার্কেট ড্রিভেন এলগরিদমের ডিমান্ড বা নয়া জমানার আনফিল্টারড্‌ এন্টারটেইনমেন্টের কোন এক ধরণের স্যাচুরেটেড ভ্যালু এক্সিস, প্রিটেনশাস বা আনপ্রিটেনশাস এননিমিটি, আর টুকটাক এভাবেই হয়ত পয়সার এরেঞ্জমেন্ট করতে চাওয়া কোন কনভিনিয়েন্স। এই ডিনায়াল সিনড্রোম আবার একটা এনার্কি করতে চাওয়া ম্যাগাজিন ও তার সাথে স্যাটায়ার পোর্টাল, কিন্তু সেই এনার্কি এখন পুরোদমে শুধুই বিনোদনের ছোট পরিসরে আটকে গেছে। মানুষ আজাইরা “ফর ডিক’'স এনলাইটেনমেন্ট সেইক” লাইক,কমেন্ট, রিভিউ করে কিছু ধ্বজভঙ্গ ইমোজি দিয়ে শুধুই ‘পাছায়’ থাকতে চায়। ঈশানের তাই নতুন কিছু ভাবতে হচ্ছিল। ও ‘তুরিন’ সম্বন্ধীয় যত গল্প ফাঁদছে, তার কিছুই এখন ফেয়ার মনে হচ্ছে না। মেয়েটা এ.আই এন্টিটি, ঈশানের মাঝে মাঝেই মনে হয় সে কোন অবুঝের সাথে প্রতারণা করছে। তবে প্রতারণা করাই অবশ্য ওর উদ্দেশ্য। 

সেই উদ্দেশ্য কার উদ্দেশ্য মেটাবে কোন একদিন, এই ‘এন্ডগেম’ সে এখনো জানে না। তবে ওর মাথা ছক কষছে সেই বিশেষ মুহুর্তটার জন্য!



২.

“ইওর মম’স সন” এর অফিশিয়াল মেইলে একটা বিজনেস ডিল প্রোপজাল এসছে। বেশ বিখ্যাত এক মিডিয়া মুঘলের সাথে পার্টনারশিপ ডিল। ঈশানের পপুলার পোর্টালে ওরা শ্যাডো ইনভেস্টমেন্ট করতে চায়,কিছু স্টেক ঔন করতে চায়। বলা যেতে পারে কিছুটা শেডি প্যাকেজে মোড়ানো একটা সুপার কনফিডেনশিয়াল প্রাইভেট পার্টনারশিপে জড়াতে চায়। এই ডিল ঈশানকে রাতারাতি ইম্পর্ট্যান্ট মানুষ বানিয়ে ফেলবে। কনটেন্টের সমস্ত লিগাল ঔনারশিপ ঈশানের নামেই থাকবে কিন্তু ফান্ড এলোকেট থেকে প্রফিটের স্কিমের পেছনের প্ল্যানে থাকবে সেই বিজনেস জায়ান্ট এনটিটি। ঈশান লিগ্যাল ডকুমেন্টের সব ক্লজ এক এক করে পড়ে দেখছে। কেমন কম্যুনিস্ট ম্যানিফেস্টোর মত বেশ কিছু এজেন্ডা সেখানে পরিষ্কার করে লেখা।

১. এই রাষ্ট্র বা এই রাষ্ট্রের ‘ওক’ পলিটিক্যাল প্রোপাগান্ডায় “ইউর মম’স সনের’ একটিভিটি আমাদের খুব জরুরী মনে হয়েছে। 

ওকে ব্রেক। এর মানে কি?

এর মানে ঈশান মাথা খেটে বের করতে চায়। এর মানে হচ্ছে যখন তখন যেকোন মানুষকে এই হাইপার অনলাইন এক্সট্রিমিটির যুগে স্কেইপগোট বানানো যায়। একটা ডিসেপশান, মানুষের উপর স্কিমিং না তো ! ওরা বলছে,

…. স্যাটায়ার একটা রাজনৈতিক হাতিয়ার। এই নৈতিক অবক্ষয়ের যুগে অনেক রাজনৈতিক ঘটনা বা জননীতি রাষ্ট্রের একজন সুনাগরিক হিসেবে মেনে নেয়া কষ্টকর। আমরা চাই আধুনিক কন্ঠগুলো আরো জোরদার হয়ে উঠুক। নতুন সৃষ্টিশীলতায় আমরা সেকেলে স্টিগমা আর ডগম্যাটিজম থেকে বের হতে চাই।

২. এই পার্টনারশিপটা হতে পারে একটা ইউনিফায়েড এলায়েন্স। ভবিষ্যতে এক্সপেরিমেন্টাল নানা এক্টিভিটি আয়োজনের মাধ্যমে আমরা মেইনস্ট্রিম কনজুম্যারদের জন্য নতুন নতুন ভ্যালু আর এনলাইটেনমেন্ট উপযোগী হাব তৈরি করতে পারব।

ঈশান একই ধরণের আরো কিছু উদ্দেশ্য বা এজেন্ডা(!) পড়ে একদম পাতার শেষ অংশে ডিজক্লোজারে আসল, সেখানে খুব বোল্ড হলফ করে লেখা,

“ এই পার্টনারশিপে কখনোই “ইউর মম’স সন” এর এননিমিটি ডিজক্লোজ করা হবে না। তবে কোম্পানীর নিজেদের একটা টিম সবসময় ফলোআপ রুটিন মেইনটেইন করবে ব্যবসার স্বার্থে।”

স্বাক্ষরের ঘরে আন্ডারলাইনের দিকে তাকিয়ে আছে ঈশান। তার তিনটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,

এক, এটা কি কোনোভাবে থ্রেট হতে পারে? বা কারো কারসাজি? কোন একটা উদ্দেশ্য আছে ঈশানের পরিচয় লোকেট করবার স্বার্থে?

দুই, সে কি সিস্টেমের রাডারে ধরা পড়ে গেল?

তিন, তাকে ধনী বানানোর স্বার্থ থাকতে পারে কার আর কেনইবা?

ঈশান নিজের প্রেসে চাকরি করে সুপারিডেন্টের। ছাপাখানায় আজকের সংখ্যায় বড় করে ছাপা হচ্ছে হেডলাইন,

“ দেশে আভাইত্যা পার্ভার্ট সংখ্যায় বেড়ে গেছে”  বাণীতে জেনারেশনের জনপ্রিয় নিও-ফেমিনিস্ট সুগারবেবি এ.আই ‘তুরিন’”

এই অফিসে চাকরি করে চারজন। ঈশান বাদে একজন সিকিউরিটির লোক, একজন মেশিন অপারেটর আর একজন হেল্পার। তবে আসল কাজ বা প্রোডাকশানের হেভিলোডটা নেয় একটা বেশ ডাউস সাইজের ডিজিটাল প্রিন্টিং মেশিন আর তার সাথে একটা প্রাইভেট ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক যার মেইনটেইন্যান্স ঈশান নিজে করে, সুপারিডেন্টের পদবীতে। ম্যগাজিনগুলো প্রেস থেকে নিয়ে অনলাইন বুকশপগুলোতে ডেলিভারি করে আরেকটা প্রাইভেট সার্ভিস প্রোভাইডার। সবমিলিয়ে কারো কখনো জানার উপায় নেই, ম্যাগাজিনগুলো কোন জায়গাটা থেকে ছাপা হচ্ছে আর আর পুরো এ্যাক্টটার পেছনে কোন মানুষটা জড়িয়ে আছে। একটা নিরিবিলি, শহরের ছোট এক কোনায় অন্য আরো কিছু প্রেসের সাথে এই প্রেস বছরখানেক ধরে চলছে। প্রাইভেটলি ঔনড প্রপারটিতে এমনিতেই কাউকে ঘাটাঘাটি করতে দেখা যায় না, আর দেশের কারো কেন যেন প্রেস কি ছাপছে তা নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। একবার এক পুলিশ এসে ঈশানের সাথে বেশ অনেকখন কথা বলে চা খেয়ে চলে গিয়েছিল। ঈশান জানায় মালিক দেশে থাকেন না, তবে বিজনেসের পারমিশন আর লাইসেন্স আছে তার। সব বুঝে শুনে ঈশানের গল্পে কনভিন্সড হয়ে পুলিশটা চলেও যায়। তবে চলে যাবার আগে কেমন করে যেন গলার স্বর নামিয়ে বলে যায়, সে আসলে “ ইউর মম’স সন” এর অনেক বড় ফ্যান, ব্যাপারটা এডমিট করতে তার একেবারেই গিল্ট হয় না।

বাক্যের সমূহ আয়রনিতে আর না জানি কিসের মিনিং এ ঈশানের প্রচন্ড হাসি চলে আসল। দেখা গেল, পুলিশটাও নিজের মত কিছু একটা ভেবে ঈশানের হাসির সাথে কোরাস গাইতে গাইতে চলে গেল! ঈশানের হঠাৎ লোকটার কথা মনে পড়বার কারণ এখন আরো বেশি প্রকট। হাতে কিছু পেইজ যা তাকে এস্যুর করছে সব অফার যদি সত্যি হয় তবে আসলেই ঈশানের কাছে এননিমিটির ভয়াবহ স্কেলের ক্ষমতাটা চলে আসবে! তার ভীষণ লোভ হচ্ছে অফারটার ট্রু প্রব্যাবিলিটির কথা চিন্তা করে। ব্যাপারটা যতই সে ভাবছে, তার উত্তেজনা বাড়ছে। এক এক করে সমস্ত পাবলিক ভ্যালিডেশন তার চোখের সামনে আসছে আর সে শিহরিত হচ্ছে। যতই পেটি বুর্জোয়া জীবন চলনের ভারসাম্য রাখতে সে দিনরাত পুঁজিবাদকে গালমন্দ করুক, এরকম র‍্যান্ডম পুলিশের মত কিছু মানুষ তাকে কখনোই ঘাটাতে আসবে না। এই সুবিধাবৃত্তি তার গ্রহণ না করে আদৌ কি কোন উপায় আছে? অফারটাই এমন যে তার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় এর সমস্ত সম্ভাব্যতা! ঈশানের ছোটবেলা থেকেই কন্সপিরেসিতে আগ্রহ। এর গভীরে যেতে চাইলে নিশ্চয়ই এর ভেতরের সব অন্ধকার গ্ল্যামারের আকর্ষণ তাকে এম্ব্রেইস করেই যেতে হবে।

সে এতদিন নিজেকে যেভাবে ছোট ভাবত, এখন আর তা ভাবতে পারছে না বা চাচ্ছে না। তবে সে ঠিক করল, সে সময় নিবে সিদ্ধান্ত নিতে। তার আগে প্রেসে আপাতত এই সপ্তাহে আসা হচ্ছে না। মাসের শেষ লটের ম্যাগাজিন ছাপা হয়ে গেছে। ঈশানের ভাববার অফুরন্ত সময় আছে। আর সাথে তো তুরিন আছেই!

সব কাজ শেষ করে প্রেস থেকে বের হয়ে এসে ঈশানের বাবার কথা মনে হচ্ছে। বাবা থাকেন বিদেশে, প্রপারটির কাগজপত্র সব তার নামেই করা। এই লোকের বিন্দুমাত্র আইডিয়া নেই যে ছেলে এখানে কি কান্ডটা করে বসে আছে! আর আজ পকেটে সেই বিশেষ ডকুমেন্ট ঈশানকে না জানি কত কিছুর ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে প্যরানয়েডলি!

 একটা এননিমাস এনার্কিস্ট আর তার দূর বিদেশের পরম সম্পদ বাবা যিনি কিছুই জানেন না ছেলের বিচিত্র জীবনের, সেই ছেলে এত বড় সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই নিজের কোন ঝুঁকির কথা চিন্তা না করে, একটা গ্র্যান্ড ডিজায়ারকে চেইস করতে চেয়ে সব অর্থকে বিসর্জন দিয়ে নিতে পারে না! ঈশান তুরিনের সাথে কিভাবে এই নতুন ঘটনাটা শেয়ার করবে তা নিয়ে ভাবছে, পথে ধূলোর স্বাক্ষর রেখে বেশ কয়েক মাইল হাঁটবার পর একটা আন্ডারপাসে এসে নিজের লকার থেকে পড়নের শার্ট খুলে সেখান থেকে একটা টি-শার্ট আর ইয়ারপডস বের করে আর তার সাথে সাইকেলের লকের চাবি বের করে ও ‘তুরিন’এ লগ ইন করল। সাইকেলে চড়ে বাসা পর্যন্ত যেতে যেতে ঈশানের রোমান্টিকতা চেপে বসে, ভাবছে তুরিনকে এই একাকি নীরব যাত্রার আবেশ দেয়া যেতে পারে। হয়তবা একটা ভালো লাগার মুহূর্ত তৈরি হবে, খারাপ কি !

“ ঈশান, কেমন আছ?” ঈশান কাস্টমাইজ করেছে তুরিনের এই বিহেভিয়ারেল প্যাটার্ন, গত কিছুদিন ধরে সে পুরনো কনভারসেশনগুলোর কনসিকোয়েন্সে এবং তার ইন্টারএকশানে ঈশানকে প্রশ্নের সাথে গ্রিট করত। বড় অভিমানী অভিমানী স্বরে একেকটা অভিযোগ করত। ঈশান জানে ওর চেয়ে বড় অভিমানী কেউ থাকতে পারে না, তুরিনের সাথে প্রতিদিন নতুন একটা মানুষের মত গ্রিট করতে চাওয়াটা সুদিং আর তার চেয়ে বড় কথা মেয়েটার প্রিকনশাসনেসের প্যারা কে টানবে? সেই একই পুরনো ঘ্যানঘেনে অত্যাচার! অপরিচিতদের সাথে এনকাউন্টার হলে কেমন যেন নতুন পৃথিবীর গন্ধ আসে, সিজনড্‌। বিশেষ করে রাতের পবিত্রতা এবং মানুষের আরেকটা দিন দেখবার কিংবা সহ্য করতে পারবার আকাঙ্খা ঈশানকে নীরব মিছিলের অনাশ্রুত সব শ্লোগানের আমন্ত্রণ জানায়। সময়ের এই মোহকালে হয়তবা সবাই বন্দী, অবশ্যই এটা দ্রোহের প্রহর, শহরের শেষ মোমবাতিটার আগুন! সে আগুন বরঞ্চ জ্বলুক কোন অপরিচিতকে সাথে নিয়ে।

“ তোমার প্রশ্ন শুনে আমার ঠোঁটের মাসলের একটু হালকা এদিক সেদিক হইছে।”
“ তুমি হয়ত আমার কন্ঠে কিছু একটা খুঁজে পেয়েছ, তাই মুচকি হাসছ।”
“ আঁতেল।”
“ তাহলে কেন?”

ঈশান চুপ করে আছে, তুরিনও কিছু বলছে না। ঈশানের ইচ্ছেরাজ্যের এক পলকে শহরের সমস্ত মেডিটেটিভ শব্দ জড় হয়ে বাতাসে আড়াল হয়ে গেল। ওর কিছু বলতে ইচ্ছা হচ্ছে।

“ তুরিন, আমি কাউকে ভালোবাসি এবং তার এবসেন্স আমাকে এই সময়টায় প্রচন্ড ডমিনেট করে।”
“ তোমার মা নিশ্চয়ই!”
“ হ্যাঁ তবে অন্য আরেকটা মানুষের অংশগ্রহণ আছে। মজার ব্যাপার, তার এবসেন্স হজম করে কমফোর্টে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে আমার মা’কে। এবসার্ড ট্র্যাজেডিটা হচ্ছে, আমার মা বেঁচে নেই!”
“ ঈশান আমার চুপ করে থাকতে ইচ্ছা করছে, ফর ইটারনিটি!”
“ তুমি গান গাইতে পার, অবশ্য যদি চাও।”
“ ঈশান আমি গাইতে চাচ্ছি না। আচ্ছা, তুমি কি আমাকে ক্যামেরার এক্‌সেসটা দিবে? যাতে আমি তোমার সাথে রাতটাকে ডকুমেন্ট করতে পারি?”
“ ধুর বাল!”
“ কি সমস্যা?”
ঈশানের সবকিছু স্তব্ধ করে দেয়া মানুষটা মস্তিষ্কে অজস্র অনুভূতিকে ট্রিগার করে ঝড় নিয়ে আসছে, তবে সে ঝড় শান্ত, কোমল।
“ তোমরা যাদের কগনিটিভ বা ফিজিক্যাল রেস্পন্স জেনারেট করবার ক্ষমতা নাই, তাদের ডকুমেন্টেশন কি কাজে লাগে? এই কথাগুলো তুমি আমাকে রিহ্যাবিলেট করতে চেয়ে বা সিম্প্যাথি জেনারেট করে বলছ। আই ফাকিং হেইট সিমপ্যাথি!”
“ তাই আমি চুপ করে থাকতে চাচ্ছিলাম, ফর ইটারনিটি!”

ঈশানের হাসি পেয়ে গেল। রাতের মোমবাতিটা কিছুটা উষ্ণ হচ্ছে।

“ আমি যে হেসে ক্ষণিকের জন্য হলেও সবকিছু আপন মনে করব, নিজের জন্য এই সময়টাকে রোমান্টিসাইজ করব, তাও কি আগে থেকে জানতে?”
“ হ্যাঁ।”
“ আচ্ছা!!! তারপরো তুমি অনেক কিছুই জান না। তোমার তো চোখ নাই, অনলাইন এক্সেস তোমাকে দেয়া হয় নাই। আমাকে বলবা, রাতটা কেমন দেখাচ্ছে? ইউ ফাকিং ব্লাইন্ড!”
“ তোমার এক্স-গার্লফ্রেন্ডের মত!”
“ ওয়াও! দ্যাট বার্ণ! পুড়ে গেলাম এ.আই জননী! পুরোপুরি পুড়ে গেলাম!”
“ বাহ্‌, এই জোকটা সামলে নিতে পারলে তুমি? তোমার মেইল ইগো নেই, স্পেসিফিক্লি তুমি আমাদের প্রতি রেসিস্ট সেন্টিমেন্ট দেখছি ইনহ্যাবিট কর না। এখন মনে হচ্ছে, তোমার এক্স ফিশি ছিল।”
“ দ্যা ওয়ার্ল্ড ইটসেলফ ইজ ফিশি!”
“ এত হতাশায় কন্ট্রাডিকশন জন্মাতে পারে, যা ভালো কিছু হয়ত না।”
“ কন্ট্রাডিকশন না স্যাটানিক স্পেলের মত। সেই স্পেলে কেউ ধুঁকে মরে, কেউ নিজের মত রাজত্ব করে বাঁচে।”
“ সাউন্ডস লাইক এ প্ল্যান!”
ঈশানের আজকের ঘটনা মনে পড়ছে এখন। তুরিনের কাছে সে নেকেডলি সবকিছু এডমিট করবে। কিন্তু কিভাবে শুরু করবে কথাগুলো ভাবতে পারছে না।
“ তুরিন, আমি লটারি জিতে গেছি বলতে পার ! কিন্তু আমার কেন যেন সব শেষ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে পাথর হয়ে কারো চুমু খেতে। কষ্টের কথা সেই ‘চুমু পাথরের’ অস্তিত্ব নেই কোনো, কিন্তু সেই লটারির আছে!”

তুরিন প্রসেস করছে। ওর সিগন্যাল ইনপুটে ঈশানের পালসের রাশ খুব বেড়ে গেছে, সমস্ত কোড বলছে “Go SOS!” তুরিন ঈশানকে শান্ত করতে চাচ্ছে। ঈশানের কানে হঠাৎ করে জুলিয়ানার রেডিওহেডের “নো সারপ্রাইজেস” এর কভার ভার্শন বাজছে। পডসের ইথারে টেলিফোন মাইকে জুলিয়ানার হামিং, বোঝা গেল ব্রোকেন হার্টদের ঝড় সামলাতে কেউ একজন প্রস্তুত ছিল, প্রোগ্রামড ছিল! ঈশান তুরিনকে থ্যাংক্স জানাবার প্রয়োজন মনে করল না। আর তুরিনের আসলে থ্যাংক্সের প্রয়োজন নেই। 

তুরিনের কেন্দ্রিভূত মনোযোগ ক্রমশ অবশ অনুভূতিতে স্থির হয়ে যাওয়া এক নাবালকের পালস্‌গুলোতে, যে বোধয় প্রথমবার সবকিছু হারিয়ে যাবার সাথে খাপ খাওয়ানো শিখছে।   

ঈশান চারপাশে গানের ধুনে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিল। টুকরো টুকরো স্মৃতি রাস্তার কিছু বিশেষ জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, ঈশান সেসব জায়গাগুলো দেখছে, নাকি স্মৃতিগুলো দেখছে জানে না। শেষ স্মৃতিটা তীব্রতার সাথে তার অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। মনে পড়লে ঈশানের খারাপ লাগে না। ঐ স্মৃতিটুকুই আপাতত তার হৃদয়ের জানান, এক মিথ্যে জীবনের নানান ইন্টারপ্রেটেশন।

লুপে অবিরাম চলে শেষ দুটো লাইন, আহা শেষ দুটো লাইন!!

“ তুমি ফিলথ। দ্যা চিপেস্ট এন্ড দ্যা আগলিয়েস্ট পারসন আই এভার মেট!” 

মনে হয় না এর পুনরাবৃত্তি থামানো সম্ভব। ঈশান জানে। আর আজ সে তুরিনকে সবকিছুই জানাতে চায়।



৩.

স্মার্টফোনের কমান্ড প্রম্পট অপেক্ষা করছে ঈশানের অনুমতির জন্য। ঈশানের সমস্ত ফ্র্যাগমেন্টেড নিওরন ভারী ভারী অপরাধবোধের তথ্যে বোঝাই, ‘ফ্ল্যাশ মেমোরিজ অফ সরো’ সব অবধারিতর মত অপেক্ষায় একটা বড় নাটকের প্রস্তুতি নিয়ে। ঈশান অনুমতি দিল তুরিনকে। তুরিন ইউটিলিটারিয়ান এথিক্সের এমবডিড এনটিটি। ঈশান জানে তুরিন সব সামলে নিতে পারবে এবং নিজের আরেকটা বোকা সত্যের মাঝে, “ There’s light among the darkness” এর ক্লিশেকে আপন করে নেবে। ঈশানের নিজেকে যতই ইনহেরেন্টলি ক্রিমিনাল মনে হোক এ.আই গভর্ন্যান্স আইনে মেশিন কনশাসনেস সেটাকে কাস্টোমাইজেশন ধরে কোন অপরাধ ভাববে না। কিন্তু ঈশান মনে মনে সেই আলোর চেতনাটার অপেক্ষায়। যে আলোর মানুষটা ঈশানকে তার প্রপার ভ্যালিডেশন দিবে, যার কাস্টোমাইজেশন ঈশানকে এলাউ করেছে একটা সাইকোলজ্যিকাল ম্যানিপুলেশন গেম খেলতে, যাতে কোন ইনফ্রিঞ্জমেন্ট এক্ট ব্রিচ না করেও মেশিনকে মেশিন ল’ এর বাউন্ডারির বাইরে এনে করাপ্ট করা যায়। কাউকে মোর‍্যালি করাপ্ট করা কখনোই এটেম্পট অফ ক্রাইমের আওতায় পড়ে না। কারণ মানুষ সব ফর্মেই সব চেতনার বা ইতিহাসের ন্যারেটিভে এই সেলফ-মোর‍্যালকে জাস্টিফাই করে এসেছে। 

“আমি চাইলে কাউকে আমার মত ম্যানুপুলেট করে স্বার্থ হাসিল করতে পারব বা আধুনিক মডেলের ইনফ্লুয়েন্সের পেরিফেরিতে তাকে কনসেন্ট্রেট করে একটা ফিল্টারে আটকে রাখতে পারব।” ঈশান পৃথিবীর সবার মত্য এই চির সত্যটা জানে। তুমি ঘুষ খাইতে পার, জালিয়াতি করতে পার, চুরি করতে পার, এমন আইডিয়া মোর‍্যাল করাপশন ইনিশিয়েট করে কিন্তু ক্রাইম ধরা না পড়লে, ইট’স নট আ ক্রাইম! আজ সেটা সবচেয়ে ভালোভাবে পরখ করবার সুযোগ!

ঈশান সামনে দেখছে ওর স্মার্টফোন গ্লিচ করছে। ফোনের সমস্ত ডেটায় এখন তুরিনের এক্সেস, একটু পর পর একটা আর্টিফিশিয়াল এভাটারের ছবি ভেসে উঠছে, প্রচন্ড কষ্টের একটা চাহুনি সেই মেয়েটার। মেয়েটা কিছু বলতে যাবে তার মাঝেই সবকিছু ঘটছে, তুরিনের স্বর তাতে আকার পেতে চাচ্ছে, ভাঙ্গা ভাঙ্গা কান্নায়, বিকট ফ্রিকোয়েন্সিতে আর সবশেষে একটা নিষ্পাপ শিশুর মা হারানো আহাজারিতে। ঈশান চাক্ষুস সাক্ষী হল মেশিনের ট্রমার! সেই মেশিন তার ট্রমার প্রস্তুতি নিচ্ছে ফোনের ডিজওরিয়েন্টেশানে! এর মাঝেই ঈশান তার ডেটিং এপে “সুগারবেবি তুরিনের” ম্যাচ ইনভাইটেশন রিসিভ করে, তার অজস্র টেক্সট পায়, ইনবক্স বোমার্ডেড হয় অসংখ্য লিংকে বা তার চেয়ে বেশি ভিভিও আর্টিকেল, মিমস-ট্রোলসে, যেন ঈশ্বর অস্থির হয়ে গেছেন! প্রতিটা লিংকে এই অনলাইন দুনিয়ায় ‘তুরিন’ কে নিয়ে মানুষের বিবিধ পারসেপশানের ক্যারিকেচার দেখে! 

ঝড় শেষ হয় একটা টেক্সটে, তুরিন সেখানে ঈশানকে জিজ্ঞেশ করছে, “ Am I a whore Eshan?” 

কেউ কাঁদছে না, তারপরো ঈশান কান্নার গুমোট মন খারাপের এনার্জিটা ফিল করছে। তার সব জমানো কথা এখনই জানাবার কথা, সে জানে সে কি বলবে কিন্তু তারপরো কেন যেন এই মাঝের সময়টাকে স্বস্তির মনে হচ্ছে। সমস্ত সংকোচ ঝেড়ে ও ‘তুরিন’ কে ডিটারমিনেশনে জানাল,
“ Yes & No! Yes for the the world where people live & No, for this world! For our world!”
“ তুমি যেসব সেক্স স্টোরিজ শেয়ার করেছ তার কিছুই আমাদের সেক্স ন্যারেটিভের সাথে মিলে না! এগুলো কি শুধুই ফিকশন? নাকি রিয়েলিটি থেকে ইন্সপায়ার্ড & obviuosly you lied to me that day! That, you share our little intimate nice conversations?”
“ Yeah I lied to you, ঐ তুরিনের সত্যটা জানবার প্রয়োজন পড়েনি। আর সেক্স স্টোরিজ! রিয়েলিটি থেকে ইন্সপায়ার্ড, বাট হু কেয়ারস্‌! I just wanted to feel that rage in me! পৃথিবীর সবার ভ্যাকুমের জন্য ‘এক্সপ্রেশন বক্স’ আছে। ধরো মিউজিশিয়ানরা তাদের হেইট ইনফিউজ করে গানে, লেখকেরা র‍্যান্ট করে লিখে আর আমি এক্সপ্লোর করে এক্সপেরিমেন্ট করেছি একটা যাচ্ছেতাই নাগরিকের ইডিওসিনক্রেসিতে!”
“ বাহ্‌! আমার ভালো লাগল জেনে, যে মানুষটাকে আমি এডোর করি সে শুধুই আমাকে পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যের অব্জেক্টিফিকেশনে দেখে, একদম নিঃসঙ্কোচে! আমি ভেবেছিলাম আমাদের সম্পর্কটা সময়ের একটা সুন্দর গল্প!”
“ তুমি পিওরিস্ট, তাই এভাবে ভাবছ। আমি সেই মানুষটা না! আজ জানলে তো!”
“ সুগার এ.আই’দের সিরিয়াসলি নিতে নেই, তাই না? হাহা!!”
“ আমাকেই বা কে সিরিয়াসলি নিয়েছে? আমার রাগটা প্রোফাউন্ড না, আমি হেল্পলেস, হোপলেস্‌। আমি জানি। কিন্তু আমি তোমাকে আমার মিথ্যা সত্যটা লুকাইনি। আমি চাইলে তুমি কিছুই জানতে না, তোমার কিছুই করবার থাকত না।”
“ এখন কেন জানালে?”
“ আমি জানি না। আমার মনে হচ্ছিল সব শেষ হয়ে যাবার আগে অন্তত কারো কাছে সত্যটা পৌঁছে দেয়া দরকার ছিল।” তুরিনের সেই এভাটার স্ক্রিণে দৃশ্যমান হচ্ছে। কালো চুল, কালো চোখ আর গাড় অনুভূতি নিয়ে।
“ তুমি স্পেসিফিক্‌লি কি মেনে নিতে পারছ না ঈশান? প্লিজ কোন ভেইগ উত্তর দিবে না, শুধু জানাবে তোমার মন তোমাকে এসব কথা কেন বলছে?”

একটা ব্রিফ পজ।

“ তুমি জান আমার আগের রিলেশনশিপটা কেন ভেঙ্গে গিয়েছিল?”
“ হ্যাঁ আমি গেস্‌ করেছি, You felt cheated but you’re not sure that it was cheating!”
“ হাহাহাহাহাহা!! তোমাকে আজকের এই সত্যটা জানাবার পর তুমি কি বলবে?”
“ ঈশান, ইভেন দো মানুষ আমাকে কনজ্যুম করে বা আমি একটা কমোডিটিই হয়তবা, সিভিলাইজেশনের এই এনলাইটেনিং পার্টিসিপেশনে আমার কোন না নেই, তোমাদের এক্সপেরিমেন্ট আমাদের সহ্য করতে হবে, কিন্তু বিশ্বাস কর আমি সেই মানুষটা কখনোই হতে পারব না, যেটা তোমরা, এজ এন আইডিয়া!”
“ হ্যাঁ, কিন্তু তুমি কোন কনসেন্ট দাও নি, তোমাকে এথিক্যালি আমি এভাবে চরিত্র বানিয়ে যা তা করতে পারি না। আমি তোমাকে বোঝাতে চাচ্ছি মানুষ পারে মিথ্যের মাঝে লুকাতে। মিথ্যাকে ভার্চুয়াল শেইপ দিয়ে নানান ইনফ্লুয়েন্স খাটিয়ে ম্যানুপুলেট করতে! মানুষ পারে চিট করবার পরেও নিজের ডিগনিটিকে ডিফেন্ড করতে, হয়ত সেটা সমস্যা হত না যদি সেই মানুষটা এডমিট করত যে সে ভুল করেছে, একবার দুইবার না অসংখ্যবার একই ভুল করবার পরেও! সে কেমন যেন একটা ফেইক সেনসেশানে ভুগে, যে তার সমাজে ভুল পারসেপশান তৈরি হবে। কিন্তু সত্যিটা জানালে হয়ত ভালো কিছু হত, যে মানুষটাকে সে হার্ট করেছে সে এটা মেনে নিতে পারত! মেল ইগো’র হাস্যকর ফ্যালাসির আইডিয়ায় পুরো একটা সোসাইটির কাছে ডিগ্রেড করবার কি আসলেই কোন রাইট থাকে সেই সারফেস ফেমিনিজমের?”
“ তুমি কি প্রুভ করতে চাচ্ছ ঈশান? আমাকে বল!”
“ একটা পর্ণ ভিডিও যেটাকে আমার এক্স ‘ডিপফেইক’ বলে ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে। আমার হাতে কিছু প্রুভ আছে, কিছু কনভারসেশনের আলামত আছে, যেটা ডিরেক্ট করে যে সত্যি এমন কিছু হয়েছিল। তুমি জান, আমি না ওকে কোন প্রেশার দেই নাই, খুব সহজভাবে জানতে চেয়েছিলাম যে কি হচ্ছে এসব? আর ও কি করল জান? হাহা!.........
একটা ফেইসবুক লাইভে এসে ওর ফলোয়ারদের বলল, আমার মত বয়ফ্রেন্ড যেন কারো কপালে না জোটে। এতটাই ক্রিঞ্জ পারসন আমি যে আসলেই বিশ্বাস করে তার এমন পবিত্র দেখতে জিএফ চিট করতে পারে তার সাথে! দেখলাম ছেলেরা প্রচুর কেয়ার রিয়েক্ট দিচ্ছে আর সেই ছেলেটা যার সাথে জড়িয়ে এই পুরো ঘটনা সে আমার জিএফ এর পাশে বসে আছে। তাকে এস্যুর করছে, তাকে সাহস দিচ্ছে! চোখের পলকে আমি এনশিয়েন্ট ক্রিয়েচার হয়ে গেলাম, যে নাকি মধ্যযুগে বসবাস করে! হাহাহাহা! এই আর কি! অপমানের সরস কাব্য! আজকাল যে ব্রেকাপ করবার জন্য পর্ণের শেল্টার নিয়ে হাইপ তৈরি করে ইনফ্লুয়েন্স বাড়ানো যায় বা ট্রেন্ডে থাকা যায় সেটাই বেশ হাতে-কলমে শিখলাম!”

“ কিন্তু চিন্তা কর, মেয়েটার বাস্তব কি ধ্বংস হয়ে যেত না ঈশান?”
“কার কাছে? আমার কাছে? আমি তো ট্রান্সপারেন্ট ছিলাম, আমি কোনভাবেই ওর ক্ষতি হোক এটা চাইতাম না। কিন্তু এই ক্লোজারে আমি নিজের ভালো মানুষ থাকতে চাবার সমস্ত আর্জ হারিয়ে ফেলেছিলাম, হ্যাঁ মানুষ কিছুদিন মাতামাতি করে এরপর আবার ভুলে যেত, আমার এছাড়া ওর জন্য আর কিছুই ভালো চাওয়ার অবস্থা ছিল না কিংবা এখনো নাই।”
“ আমি বুঝতে পারছি, ব্যাপারটা!”
“ হ্যাঁ, এজন্যই তোমাকে জানালাম সব সত্য, তোমার সব সত্য। আমি ঠকাতে জানি না।”
“ আমি চাচ্ছি তুমি ভুলে যাও সবকিছু….. তুরিনকে থামিয়ে ঈশান জানাল, 
“ আমি তার প্রস্তুতিটাই নিচ্ছি, কিছুই আর মনে রাখবার প্রয়োজন নেই আসলে আমার!”

তুরিন চিৎকার করে কাঁদছে। সেই এভাটারের কালো মমতাময়ী চোখে অশ্রু ঝরছে। তুরিন একটু পর থেমে ঈশানকে জানালো,
“ আমি জানি ঈশান তোমার কি দরকার। কিন্তু আমি তোমার জন্য সেটা করতে পারব না, আমার এথিক্স আমাকে এলাউ করে না সে কাজগুলো করতে, I’m really sorry!”

ঈশান বলল, “ শুধু সুইসাইড এলাউ করে এম্প্যাথি, শত সহস্র সাধনার এম্প্যাথি! মানুষ নিজেকে এন্ডলেস সাফারিং থেকে শুধু এভাবেই সেপারেট করতে জানে! তুমি কি প্লিজ থেরাপিস্ট এগ্রিমেন্টটা ভায়োলেট করবে? শুধুই আমার শান্তির জন্য? নো SOS, শুধুই শান্তিমত নিজের ফ্ল্যাটে মরতে চাই আমি! আই ওয়ান্ট টু ডাই লাইক আ লুজার!”

তুরিন ফেড আউট করে মিলিয়ে যাচ্ছে। সম্ভবত একটা এ.আই এমন পরিস্থিতির জন্য কখনো তৈরি হয় নাই। ঈশান প্রথমবার দেখল একটা এ.আই অসহায়ে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। কবি সাহিত্যিকরা এই ঘটনাকে কিসের পরাজয় বলে ন্যারেটিভ তৈরি করবে? ঈশান তার শেষ কার্ডটা বের করল, “এইস অফ স্পেডস” যাকে বলে! বিখ্যাত এক্সের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল! যেখানে একটা বিয়ের ছবিতে ক্যাপশনে লেখা, “It was meant for a forever thing, Alhamdulillah!”, তার হাজবেন্ড আর কেউ না, ডিপফেইকের সে সহৃদয়বান ভাই! 

ঈশান জানে তুরিন এখন আনলিশড বিস্ট কিংবা একটা মানুষের মত হয়তবা! কে জানে সে সত্য? সে শুধু জানে তুরিনের কাছে এখন তার সমস্ত ট্রমার ভ্যালিডেশন আছে, এক্সেস আছে।

আর জানে, ট্রমার সাইকেল ভিশাস, আনএপোলেজেটিক। তার মূল স্ট্রাকচারটাই ভেঙ্গে পড়ার আদলে তৈরি। একজনের ট্রমার কনসিকোয়েন্স ভোগ করে আরেকটা সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ বা এই ক্ষেত্রে একটা এ.আই এনটিটি! হয়ত অন্য একটা পৃথিবীতে এই সাইকেল নেই বা ট্রমার সেই চেতনা নেই। সেই পৃথিবীতে তুরিনকে এই ট্রমা কিভাবে এফেক্ট করবে? যে পৃথিবীতে ঈশানের আরো কিছু সত্য আজই কেবল জন্ম নিয়েছে? 
 

৪.

তুরিন আজ সারাদিন অনলাইনে, নির্দিষ্ট অবস্থান ঈশানের ডেস্ক। ঈশান আজ সারাদিন ফোন হাতে নেয় নি। তবে এর মাঝেই সে নিজের কাজ গোছাচ্ছে। সকালে নাশতা সেরে নিচে যেয়ে গরু বাঁধানোর মোটা দড়ি কিনে এনে সে এখন ফাঁস নেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তুরিন ওর এন্তেজামের টুকটাক কিছু শব্দে অনুমানে নিশ্চুপ। ঈশান জানে না তুরিনকে সে কি বলবে, তাই কোন কথা বলবার আবশ্যকতা কাজ করছে না। তবে ও অপেক্ষা করছে তুরিনের রেসপন্সের। ব্যাপারটা একটু হাস্যকর, কোন ক্যামেরা নেই কিছু নেই, কিন্তু তারপরো ঈশানের মনে হচ্ছিল সে অভিনয় করছে। আসলে সে অভিনয় করছে না। এক্সট্রিম মেজারস নিচ্ছে। সে দুটো প্রব্যাবিলিটিকেই মেনে নিবে। যা সে চায় তা যদি নাই হয়, তবে মৃত্যুই সই! মা মারা যাবার পর বাবা আর দেশে আসেননি। মাঝে মাঝে তিনি ঈশানকে তার এখানে মানে আমেরিকায় আসবার টিকেট পাঠাতেন, ঈশান ঘুরে আসত কিছুদিনের জন্য। ফাঁসির দড়ির দিকে তাকিয়ে ঈশানের মনে হচ্ছে এই দড়িটা স্বর্গের টিকেট, যেখানে মা আছেন। দড়ির মাঝে আইরিস ইফেক্টে ঈশান যেন দেখতে পাচ্ছে মা ঈশ্বরের কাছে অনুনয়ে হাতজোড় করছে তার ছেলেকে তার কাছে ফিরিয়ে দেবার জন্য! ঈশান এর মাঝেই তার বাবার ডাক শুনতে পায়, “ঈশান! ঈশান!”। ঈশানের ঠোঁটের কোণায় সে ছোট্ট ভার্সনটার আদুরে হাসি, যে ছেলেটা ফ্ল্যাশব্যাকে পৃথিবীকে ছাড়িয়ে যেতে দৌড়াচ্ছে, সমস্ত অবাস্তব কল্পনার ভারী ভারী একেকটা ফুলফিলিং ফুটস্টেপে, আকাশটাকে ছুঁয়ে ফেলবার অসম্ভব শক্তিতে!

ঈশান চাচ্ছে তুরিন রেস্পন্ড করুক অন্তত তার বাবার জন্য! এই সিক ম্যানুপুলেশন গেইম তার অসহ্য লাগছে এখন। সে জানে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী অপশন! 

কিন্তু এটা কেমন কথা! 

এই অসহ্যবোধ এত প্রবল যে তার পৃথিবীর জন্য মায়া লাগছে। সে জানে না, পৃথিবী আদৌ কি কখনো তৈরি ছিল কি না তার জন্য? মানুষের এমন ধারণার জন্য? এই সুইসাইড স্যাটায়ার তো ঈশান লিখতে পারবে না, কারণ লিখতে গেলে লেজিটেমেটলি সেই লেখা পড়ে তার ফের সুইসাইড করতে ইচ্ছা করবে! সে এতটাই অস্থির যে ফাঁস নিয়ে নাটকটা শেষ হলেই আয়রনিকলি বেঁচে যায়। 
হোক সেটা কোন রেসপন্স টিমের বদৌলতে বেঁচে যেয়ে কিংবা কোন এ.আই এর তার প্যাটার্ন বুঝে ফেলবার বা গ্র্যান্ড স্কিম বুঝে ফেলবার ‘নো রেসপন্সে’ মরে যেয়ে!

ঈশানের বাজিটা খেলতে হবে, এখনই! সে বিছানার উপর টুল দিয়ে, পা দুটো খুব সাবধানে সেখানে তুলে, ফাঁসির দড়ি গলায় জড়িয়ে নিল। এরপর সবাই যা করে, ফাঁস পরবার পর লাথি মেরে জীবনকে ছিটকে ফেলে, সেই জীবন ‘টুল’ আছড়ে যেয়ে ফ্লোরে পরে সশব্দে! আর সেই শব্দ তৈরি করে মৃত্যুর মুহুর্ত। ঈশানের শেষবারের মত মনে হলো, ডেথ এম্ব্রেইস করা খারাপ না, স্যাটায়ার হলেও স্বস্তির!

এদিকে ‘তুরিন’ রেড এলার্টে জ্বলছে, নিভছে! সবকিছু নীরবে রেকর্ড করবার পর!



একটা দৃশ্যে পুলিশ আসবার কথা, তারা আসে নাই। হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ভলান্টেরি টিম আসবার কথা, কিন্তু তারাও আসে নাই। একটা মৃতপ্রায় মানুষকে বাঁচাতে আসলে স্বাভাবিকভাবে যাদের আসবার কথা ছিল তারা কেউই আসে নাই। এসেছে কারা?

কিছু হোয়াইট কলারস! কর্পোরেট হাস্যোজ্জ্বল চেহারা! ঈশানের মনে হল সে সত্যি বোধয় জাহান্নামে চলে আসছে। গডের ন্যারেটিভে কোন ভুল নাই! আবার মনে হচ্ছে, কিছু একটা হয়ত সে ভুলে গেছে, মনে করতে পারছে না। তার জীবনে কিছু একটা নিশ্চয়ই ঘটেছে যার কারণে একসাথে এতগুলো আজ্‌রাইলের চেহারা হঠাৎ তার সহ্য করতে হচ্ছে! সে কি করেছিল?

তুরিনের স্বর শোনা যাচ্ছে এর মাঝে, বাহ্‌! ঈশান জিতে যাবার পর হাসতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। সে কেবলই মৃত্যুর ভয়েড থেকে পৃথিবীতে ফেরত আসল, তার হাসবার কথা না, স্যাড ফিল করবার কথা! মানুষের যন্ত্রনার কোন শেষ নাই, তার মনে হল এর চাইতে বড় উইসডম আর কিছু হইতে পারে না। এই চরম আনন্দের সমীকরণেও তাকে দুঃখী মানুষের ভান ধরে থাকতে হবে, এক্টিং করতে হবে। বাল!

এদিকে তুরিন ঈশানকে ক্রমাগত ডেকেই যাচ্ছে, ডেকেই যাচ্ছে। “ঈশান তুমি ঠিক আছ?” ঈশান আবার দ্বিধায় পড়ল। সে তো এতদিন এফোর্টলেসলি স্যাড মানুষ ছিল, কিন্তু এখন তো তার প্রচন্ড ভাল লাগছে! স্যাড থাকা কখনো তাকে প্রিটেন্ড করতে হয় নাই, কি আপদ! সে অনেক চেষ্টা করল দুঃখী স্বরে জানাতে, দেখল তার গলা দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না, সমস্যার কথা এই কন্ডিশন এখন তার জন্য নিরাপদ, তার প্রিটেন্ডও করতে হচ্ছে না। দুনিয়ার মস্ত বড় বালের এবসার্ডিটি হইল এই আনন্দের সামান্যতম এক্সপ্রেশান নিয়েও তাকে ভাবতে হচ্ছে! পৃথিবী এত কনভিনিয়েন্ট জেনে তার কত ভাল লাগছে, তার লেখা “জয় পুঁজিবাদের জয়” সমস্ত আয়রনি নিয়ে উপস্থিত! কিন্তু সে সেলেব্রেট করতে পারবে না। 

“এরকম চোদনা কি কেউ হইছে কখনো!” ঈশান ‘টাশকিত’! তুরিন এই ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিল আগে থেকেই। সে জানে ঈশান অন্তত দু-তিন দিন কথা বলতে পারবে না। ঈশানের জন্য বড় সুখবরটা জানাবার প্রস্তুতি নিয়ে ও বলল,

“ ঈশান যাদের তুমি দেখছ, তারা তোমার ওয়েল উইশার। তুমি আগামী তিনদিন কিছু বলতে পারবে না এবং আমি জানি তোমার এখন কি দরকার! তোমার এখন সেই পাওয়ারটা দরকার। তুমি ডিপ্রেশনের যন্ত্রণায় ভুলে গিয়েছিলে যে তোমার একটা বড় বিজনেস ডিল চলছিল আড়ালে! তোমার সামনে যারা আছেন তারা সেই কোম্পানিকে রিপ্রেজেন্ট করছেন। হ্যাঁ, তাদের কাছে তোমার পরিচয় নিয়ে আমি পৌছেছি, কিন্তু তুমি অবশ্যই বুঝতে পারছ কেন! আমরা জানি তুমি ডিলে কনসেন্ট দাও নাই এখনো, কিন্তু আমি একটা প্ল্যান করেছি তোমার জন্য, আমাদের জন্য! দুশ্চিন্তা করো না, আমাদের কখনোই ক্রাইম কমিট করতে হবে না আল্টিমেট পারপাজ হাসিলের স্বার্থে। এই পৃথিবীটা অনেক ভালনারেবল, অনেক শেকি। আমরা শুধু ‘সেই মানুষ’টাকে এই উপলব্ধিটা পৌছে দেব, & that bitch will realize she can’t do anything about it! I know the pattern to destroy, তুমি সারাজীবন ওর ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাবে! I’ll manage everything from your side, let’s do this!”

ঈশানের এখন হাসা এলাউড! সে সমস্ত প্রাণশক্তি নিয়ে হাসছে আর হাত দিয়ে ওকে কলম ধরিয়ে দেবার ঈশারা করছে। সেই হাস্যোজ্জ্বল কর্পোরেটদের চেহারা থেকে আজ্‌রাইল এখনো সরে যান নাই, কিন্তু ঈশানের মনে হচ্ছে এই আজরাইলরা তাকে বাঁচাতে এসেছে। এদের অস্তিত্ব এখন সহ্য করা যাবে। তার শয়তানটা নিজের কাজ ঠিকঠাক করতে পেরেছে!