পোস্টস

প্রবন্ধ

অসাম্প্রদায়িকতা কী? অসাম্প্রদায়িক প্রমাণ করতে কি অন্য ধর্ম পালন ও তাদের উৎসবে অংশ নেয়া আবশ্যক?

২৬ এপ্রিল ২০২৪

তানবীর রহমান

মূল লেখক তানবীর রহমান

দুনিয়ায় সব ধর্মেই কিছু না কিছু বিষয় থাকে যা অন্য সব ধর্ম থেকে সে ধর্মকে পৃথক করে রেখেছে। 

মানুষ তার স্ব স্ব ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করার অধিকার রাখে। একজন মুসলমান তার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ভোগ করবে। তেমনি সনাতন, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ পৃথিবীতে সব ধর্মের মানুষের ক্ষেত্রেও। জোর করে কাউকে ধর্ম পরিবর্তন করারও দরকার নাই। যদি কেউ সজ্ঞানে পরিবর্তন করে সেটা অন্য বিষয়। 

মুসলমানরা তাদের ধর্মের কিছু উৎসব পালন করে থাকে।  যেমন— কুরবানির ঈদের উৎসব। যেখানে গরু, ছাগল, উট এগুলা দিয়েই কুরবানি করা হয়। এই দক্ষিণ এশিয়াতে গরু দিয়ে কুরবানির রেওয়াজই বেশ প্রবল। অন্যদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে গরু পবিত্র। বলা যায় গরুর মাংস খাওয়া তারা নিষিদ্ধ মনে করে। কোনো সনাতনী হিন্দুগণের উচিত না তার ধর্ম বাদ দিয়ে 'ধর্ম যার যার উৎসব সবার' — স্লোগান তুলে অসাম্প্রদায়িক চেতনার নামে ভেদাভেদ ভুলে গরুর মাংস খাওয়ায় অংশ নেয়া। এটা তার ধর্মের প্রতিও তার নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রাখে। যদি ধর্মে নিষেধাজ্ঞা না থাকে তাহলে অন্য ধর্মের কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিলে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু নাই।

আবার সনাতনী হিন্দুগণের কোনো উৎসবেও মুসলমানদের অংশ নেয়া উচিত না। তাদের ধর্মীয় উৎসবে গিয়ে একাকার হয়ে যাওয়া অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ না বরং এটা উভয় ধর্মের জন্যই অবমাননাকর। সনাতনী মানুষজন তাদের উৎসব স্বাধীনভাবে পালন করুন এখানে আপত্তি তোলা যাবে না। সেখানে কোনো মুসলমান দাবিকৃত মানুষও তাদের উৎসবে অংশগ্রহণ সহিহ দাবি করতে পারবে না কারণ ইসলামে কিছু বিধিনিষেধ আছে।

একই কথা পৃথিবীতে যত ধর্মের মানুষ আছে তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মানুষ তার স্ব স্ব ধর্ম স্বাধীন ভাবে পালন করার অধিকার পেলেই সেটা অসাম্প্রদায়িকতা।

কিন্তু এই ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রার্থনা উৎসব বাদে স্বাভাবিক জীবনে সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান দরকার। ধর্মের বিধিনিষেধ ছাড়া মুসলমান তার অন্য সকল ধর্মের পরিচিত বন্ধু, সহকর্মীসহ সকলের দাওয়াত গ্রহণ করতে পারে। তাদের বাসায় খেতে পারেন, যদি সে খাবারে তার ধর্মের নিষেধাজ্ঞা না থাকে। প্রত্যাহিক দিনে একই সাথে কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে সকল ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালন করুক এতে সমস্যা সৃষ্টি করা যাবে না। ধর্মের দোহাই দিলে অন্য ধর্মের সাধারণ মানুষকে হিংসা করাও যাবে না। সবার সাথে ভালো আচরণ ব্যবহারও কাম্য। 

তবে অসাম্প্রদায়িকতার নামে ধর্মগুলোকে জগাখিচুরি করার প্রচেষ্টা চলছে এবং অনেকাংশে সফলও বলা যায়। লিবারিজমের নামে ধর্মগুলোর মধ্যে কাটছাঁট করে দেওয়া হচ্ছে। প্রচলিত ধর্মের মানুষগুলোকে অন্য ধর্মের উৎসবে অংশগ্রহণ করে তা সঠিক প্রমাণে নিজেদের ধর্মের অপব্যাখ্যা দেয়া ধর্ম অবমাননার মতোই। আমি অসাম্প্রদায়িক এটা প্রমাণের জন্য নিজ ধর্মের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে সেটা প্রমাণের প্রয়োজন নেই। বরং স্বাভাবিক জীবনে সবার সাথে সুসম্পর্ক, সহাবস্থান পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগিতা ও অধিকার নিশ্চিতকরণের মতো বিষয়গুলো মাথায় রেখে মানুষ জীবনযাপন করলে সেটাই বরং অসাম্প্রদায়িকতা। 

কেউ যদি চায় সে সব ধর্মের উৎসবে অংশগ্রহণ করবে, সব ধর্ম থেকে কিছু কিছু বিষয় সে মানবে কিন্তু পুরোপুরি মানবে না সেক্ষেত্রে সে মানুষগুলোর উচিত প্রচলিত কোনো ধর্ম পরিচয়ে নিজেকে যাতে জাহির না করে। বরং সে সব ধর্মের সংমিশ্রণে নতুন ধর্ম পালন করছে এটাই তার ধর্ম পরিচয় হওয়া উচিত।

লেখক সম্পর্কে

আমি তানবীর রহমান। পড়াশোনা করছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফি ডিপার্টমেন্টে। 

ফিলোসফির চর্চা করি। সেই সাথে সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব, রাজনীতি ও সমাজতত্ত্ব নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। চেষ্টা করি সমাজের সংস্কারের জন্য নিজের জায়গা থেকে কথা বলতে এবং মানুষের মাঝে নিজের ভাবনা জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে। বিশ্বাস করি নিজের জায়গা থেকে সচেতনতা ও কাজে তার বাস্তবায়ন সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ লিখি। কখনো ক্রীড়াজগত নিয়েও লেখা হয়। আমি স্বাধীনতাচেতা, যখন যা ভালো লাগে তা মনোযোগ দিয়ে করার চেষ্টা করি।

স্বপ্ন দেখি একদিন দেশটা 'সোনার বাংলাদেশ' হিসেবেই গড়ে উঠবে। মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। বাংলাদেশ প্রকৃত শিক্ষিত মানুষদের দেশ হয়ে উঠবে। সবাই তাদের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিতভাবে পাবে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য থেকে মুক্তি হবে। প্রভাবশালী লোকেদের দাসত্ব থেকে মুক্তি মিলবে খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষের।

আমার স্বপ্ন হয়তো-বা পূরণ হবে, হয়তো হবে না। কিন্তু স্বপ্নই আমাদের আশা হয়ে বাঁচতে অনুপ্রেরণা জোগায়।  সত্যের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
তানবীর রহমান তানবীর রহমান শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়